সাহিত্য আলাপ

সাহিত্য কি মুক্ত চিন্তার আধার, নাকি দালালির হাতিয়ার?

(আল মামুন রিটন, দীপ্তদেশ) সাহিত্য মানব সভ্যতার এক অমূল্য সম্পদ। এটি মানুষের চিন্তা, অনুভূতি, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসকে ধারণ করে। সাহিত্যের মাধ্যমে আমরা অতীতকে বুঝি, বর্তমানকে বিশ্লেষণ করি এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি। কিন্তু যখন এই সাহিত্য রাষ্ট্র, দল বা ব্যক্তিগত মতবাদ প্রতিষ্ঠার হাতিয়ারে পরিণত হয়, তখন তা অত্যন্ত লজ্জার এবং ঘৃণার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

সাহিত্যের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মননশীলতা, সংবেদনশীলতা এবং চিন্তার স্বাধীনতাকে বিকশিত করা। এটি সমাজের আয়না, যা মানুষের সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশা, সংগ্রাম এবং বিজয়কে প্রতিফলিত করে। সাহিত্য কখনোই কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা মতবাদের দাস হওয়ার কথা নয়। এটি সর্বজনীন এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতীক।

দুর্ভাগ্যবশত, ইতিহাসে বারবার দেখা গেছে যে সাহিত্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো বিশেষ রাষ্ট্র, দল বা ব্যক্তির স্বার্থে সাহিত্যকে বিকৃত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে জনমতকে প্রভাবিত করা, মতাদর্শিক প্রোপাগান্ডা ছড়ানো এবং বিরোধী কণ্ঠস্বরকে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদ নামক একটি সাহিত্য ধারা তৈরি করা হয়েছিল, যা কমিউনিস্ট পার্টির আদর্শকে প্রচার করত। এই সাহিত্য প্রকৃত সাহিত্যিক মূল্যবোধের চেয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে বেশি গুরুত্ব দিত। একইভাবে, নাজি জার্মানিতে ইহুদি বিরোধী সাহিত্য তৈরি করা হয়েছিল, যা ঘৃণা এবং বিদ্বেষ ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

কখনো কখনো সাহিত্যিকরা নিজেদের ব্যক্তিগত মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য সাহিত্যকে ব্যবহার করেন। তারা সাহিত্যের মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক, সামাজিক বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে জনগণের উপর চাপিয়ে দিতে চান। এই ধরনের সাহিত্য প্রকৃত সাহিত্যিক সৃষ্টি নয়, বরং মতবাদ প্রচারের একটি মাধ্যম। এটি সাহিত্যের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে ক্ষুণ্ন করে এবং পাঠকদের চিন্তার স্বাধীনতাকে হরণ করে।

সাহিত্যিকদের একটি বড় দায়িত্ব রয়েছে। তাদের উচিত সাহিত্যকে মুক্ত চিন্তার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা, যেখানে সব ধরনের মতামত এবং বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটবে। সাহিত্যিকরা সমাজের বিবেক, তাদের কাজ হলো সত্যকে তুলে ধরা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা এবং মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করা।

সাহিত্য কখনোই কোনো রাষ্ট্র, দল বা ব্যক্তিগত মতবাদের দাস হওয়ার কথা নয়। এটি মুক্ত চিন্তার আধার, মানবিক মূল্যবোধের প্রতীক। যখন সাহিত্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, তখন তা তার প্রকৃত মহিমা হারায় এবং লজ্জা ও ঘৃণার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের উচিত সাহিত্যের স্বাধীনতা রক্ষা করা এবং এটিকে সকল প্রকার অপব্যবহার থেকে মুক্ত রাখা। কারণ সাহিত্য হলো মানব সভ্যতার আত্মা, যা আমাদেরকে আমাদের মানবিকতা এবং স্বাধীন চিন্তার শক্তি সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেয়।

(লেখাটি অবশ্যই ইঙ্গিত, তবে সঠিক ত্রুটি পাঠক ঐসমস্ত তথাকথিত কবিতা অথবা নিবন্ধ পড়লেই ধরতে পারবেন বলেই আমি মনে করি)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button