বিজ্ঞান আলাপ

কেটরিনের অদ্ভুত নক্ষত্র: মহাবিশ্বের এক রহস্যময় আলো

মহাবিশ্ব অসীম বিস্ময়ে ভরা, এবং এর মধ্যে কিছু রহস্য এমন আছে যা বিজ্ঞানীদেরও হতবাক করে দেয়। তেমনই এক রহস্যময় তারা হলো “কেটরিনের অদ্ভুত নক্ষত্র”, যা Tabby’s Star বা KIC 8462852 নামেও পরিচিত। ২০১৫ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ট্যাবিথা বোয়াজিয়ান এবং তার দল এই নক্ষত্রের অস্বাভাবিক উজ্জ্বলতার ওঠানামা লক্ষ্য করেন, যা তখন থেকেই মহাকাশ গবেষণার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।

সাধারণত, কোনো গ্রহ যখন তারার সামনে দিয়ে যায়, তখন তার উজ্জ্বলতা সামান্য কমে যায় এবং কিছু সময় পর আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু Tabby’s Star-এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। এর উজ্জ্বলতা অনিয়মিতভাবে কমে এবং আবার বৃদ্ধি পায়, যা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। কিছু সময় উজ্জ্বলতা ২০% পর্যন্ত কমে যায়, যা কোনো গ্রহ বা চাঁদের কারণে হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এই রহস্যময় তারার অস্বাভাবিক আচরণের ব্যাখ্যা দিতে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন তত্ত্ব দিয়েছেন:

  1. ধুলো বা ধ্বংসাবশেষ মেঘ: কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, নক্ষত্রটির চারপাশে ধুলো বা ধ্বংসাবশেষের বিশাল মেঘ ঘুরপাক খাচ্ছে, যা এর উজ্জ্বলতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
  2. ভগ্ন গ্রহ বা ধূমকেতু: আরেকটি তত্ত্ব বলছে, হয়তো Tabby’s Star-এর চারপাশে একাধিক ধূমকেতু বা ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রহ রয়েছে, যেগুলোর টুকরো নক্ষত্রের আলোকে আড়াল করছে।
  3. এলিয়েন মেগাস্ট্রাকচার: সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ তত্ত্বগুলোর একটি হলো এলিয়েন সভ্যতার সম্ভাব্য মেগাস্ট্রাকচার, যেমন Dyson Sphere, যা একটি উন্নত সভ্যতা তাদের শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। যদিও এখনো এই তত্ত্বের কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নেই, তবে এটি কল্পনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

Tabby’s Star আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মহাবিশ্বে এখনো অনেক অজানা বিষয় রয়েছে। এ ধরনের রহস্য আমাদের কৌতূহল বাড়ায় এবং আরও গভীরভাবে মহাকাশ গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করে। আধুনিক দূরবীন এবং মহাকাশ গবেষণার অগ্রগতির মাধ্যমে একদিন হয়তো আমরা এই রহস্যের সঠিক সমাধান খুঁজে পাব। ততদিন পর্যন্ত, Tabby’s Star মহাবিশ্বের এক অনবদ্য ধাঁধা হয়েই থাকবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button