কবিতাসাহিত্য

তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্যের – একগুচ্ছ কবিতা

অদৃশ্য চেতনা
-তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য

অদ্ভুত এক অন্ধকারের মধ্যে কোনো এক অজ্ঞাত গুহায় বসেছে চেতনার গণসম্মেলন!
বিষয়,”আর আঁধার নয়,এবার আলো চাই।”
অদৃশ্য চেতনার নির্বাক বক্তৃতায় সবাই দিচ্ছে জোরে জোরে হাততালি,ফেটে পড়ছে গুহার অন্ধকার জগৎ!
অবশেষে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বিকার গুহার দেওয়ালে লেখা হলো প্রতিবাদের স্লোগান।
সমস্বরে ধ্বনি উঠলো,”আলো চাই!আলো চাই!”
যদিও বহির্জগতের কেউ এ কথা জানলো না,
কারণ চেতনা এখনও গুহার অন্ধকারে!

ঘুম-ভাঙানিয়া
তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য

তেপান্তরের মাঠে কবে যে লোকটা ঘুমিয়েছিল,কে জানে!
তারপর বয়ে গেছে বহু শতাব্দীর স্রোত;
বেড়েছে পৃথিবীর বয়স।
হাজার বছর ধরে প্রভাত হয়েছে, কলকাকলিতে মুখরিত হয়েছে জগৎ,
এসেছে সন্ধ্যা,অন্ধকার রাত; আবারও প্রভাত!
ঊষা আর গোধূলির বয়স-সন্ধিক্ষণে দিগন্তরেখায় আলো-আঁধারি লুকোচুরির দুরন্তপনায় কতো যে বয়স বেড়েছে পৃথিবীর!
আর লোকটা আছে ঘুমিয়ে!
ভোরের পাখি কবেই বেরিয়ে গেছে, শিশিরফোঁটায় কবেই চক্ষুদান হয়েছে ঘাসের,
আলোর মেলায় ভাসছে জগৎ।
বইঠা বেয়ে নদীর বুক চিরে ছুটে যায় নাও, চলাচল করে এপার-ওপার।
পাহাড়ি আগাছার গা-ধুইয়ে নেমে আসে ঝরনাধারা, পূর্ণ হয় নদীর প্রাণ।
এতো আলো, এতো কোলাহল, এতো মধুময় চারিদিকে;
তবুও লোকটার ঘুম ভাঙলো না!
ওগো চির-জাগ্রত ঘুম-ভাঙানিয়া,
ভাঙাও ঘুম এ মানুষের,
এ মনুষ্যত্বের।

সাধারণ প্রশ্ন
তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য

প্রশ্নটা সাধারণ, পৃথিবীটা কার?
কে যেন বলেছিল, বীরভোগ্যার!
লুটেপুটে খায় যারা তারা যদি বীর,
হতাশায় ভরে মন বুক চৌচির!

প্রশ্নটা সাধারণ, পৃথিবীটা কার?
আছে জোর যার গায়ে মল্লুক তার!
দুর্বলে জোর যদি বলা হয় বল,
বলবানে ধিক তবে ক্ষমতা বিফল!

প্রশ্নটা সাধারণ, পৃথিবীটা কার?
আছে টাকা যার কাছে পৃথিবীটা তার?
টাকার মূল্যে যার নাম পরিচয়,
টাকাই মানুষ তবে সে মানুষ নয়!

প্রশ্নটা সাধারণ, পৃথিবীটা কার?
ভালোবাসা আছে যার পৃথিবীটা তার।
সব জীবে সম জ্ঞান করে যেই জন,
আসল মানুষ সে যে ধন্য জীবন!

উল্লম্ব সূচক
তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য

একটা অদৃশ্য সুতোয় ঝুলে এপার ওপার!
মাঝে বয়ে যায় এক জীবন্ত স্রোত।
ভাসছি আমি,তুমি,সবাই।
ভাসছি গোটা জগৎ!
ভেসে যায় সময়ের ক্যানভাসে আঁকতে থাকা তৈলচিত্রের সব রং!
অদৃশ্য কোনো হাত ধরে থাকে দাঁড়িপাল্লা,
পরিমাপ করে সবই।
উল্লম্ব সূচকে মহাকালের তারই নির্দেশনা!

হৃতবর্ণ কুসুম
তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য

আজকাল ফুল দেখতে আর ভালো লাগে না!
লাল ফুল দেখলে বড়ো ভয় লাগে মনে!
রঙটা যেন কীসের সঙ্গে একদম মিলে যায়!
অথচ ফুল তো তেমন হওয়ার কথা ছিল না।
হয়তো বিবর্ণ মনে সবকিছুই বর্ণহীন লাগে,
অনেকটা ঠিক সাদা ফুলের মতোই বিবর্ণ।
সাদা ফুলেও তো আর মন বসে না!
সাদা ফুল দেখলে আবার মৃত মানুষের কথা মনে পড়ে!

আকাশ-কুসুম
তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য

ধন্যি ছেলে দেখবে নাকি ফুল
মাটিতে নয়,ঐ আকাশের গায়’,
অবাক কথা কেন এমন ভুল
আকাশ-কুসুম কোথায় পাওয়া যায়!

হয়তো যদি থাকতো মেঘে মাটি
মাটির কণা মাখতো মেঘে’ জল,
বাতাস যদি করতো পরিপাটি
আকাশে তবে ফুটতো কুসুম-ফল!

থাকতো যদি মাথার আকাশ নিচে
মাটি যদি দিতো আকাশ পাড়ি,
রংধনুটা থাকতো না আর মিছে
হাতের মুঠোয় থাকতো আকাশবাড়ি।

হাজার পাখির বসতো হেথায় মেলা
মুক্ত বাতাসে লাগতো প্রাণের ঢল,
ইচ্ছে হলেই পেতাম মেঘের ভেলা
আকাশবাড়িতে ফুটতো কুসুম দল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button