
ব্ল্যাক হোল—এই মহাজাগতিক দৈত্যরা ছায়াপথের কেন্দ্রে ঘাপটি মেরে বসে থাকে, কিছু শান্ত, আবার কিছু ক্ষুধার্ত শিকারির মতো ঘন ঘন তারকা ও গ্যাস গিলে খায়। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা এক প্রাচীনতম সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের সন্ধান পেয়েছেন, যা মাত্র এক বিলিয়ন বছর বয়সী মহাবিশ্বে বিকিরণ করছিল এবং শক্তিশালী জেট নিক্ষেপ করছিল। নাসার NuSTAR ও Chandra X-ray Observatory থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা এই অভূতপূর্ব আবিষ্কারটি করেছেন।
এই ব্ল্যাক হোলটি একটি কোয়াসার, যার নাম CFHQS J1429+5447। এটি প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৫ বছর আগে, কিন্তু সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে এটি মাত্র চার মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এই বিশাল পরিবর্তন ইঙ্গিত দেয় যে ব্ল্যাক হোলটি একটি জোরালো কসমিক জেট নির্গত করছে, যা আলোর গতির কাছাকাছি বেগে মহাকাশে ছুটে চলেছে।
গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়া মার্কোটুলি এবং হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের থমাস কনার বলেন, “এই ফলাফলগুলো সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল কীভাবে দ্রুত বড় হয়ে ওঠে এবং তাদের জেট কীভাবে বিকশিত হয় তা বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এই কোয়াসার থেকে নির্গত আলো যখন মহাবিশ্বে যাত্রা শুরু করেছিল, তখন এটি ছিল Epoch of Reionization—একটি সময় যখন মহাবিশ্ব ধীরে ধীরে স্বচ্ছ হয়ে ওঠে এবং আলোর চলাচলের পথ পরিষ্কার হয়। গবেষকরা মনে করছেন, এই শক্তিশালী ব্ল্যাক হোল এবং তার বিশাল জেটই হয়তো সেই সময় মহাবিশ্বকে স্বচ্ছ করতে বড় ভূমিকা রেখেছিল।
এই গবেষণা থেকে স্পষ্ট, মহাজাগতিক ইতিহাসের প্রথম দিকের ব্ল্যাক হোলগুলো শুধু স্থবির শিকারি ছিল না, বরং তারা জেটের মাধ্যমে বিশাল শক্তি ছড়িয়ে দিয়ে মহাবিশ্বের গঠন ও বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। গবেষকরা ভবিষ্যতে আরও বিস্তারিত গবেষণার মাধ্যমে এই রহস্যের পর্দা উন্মোচনের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।