
ফিলিস্তিন ইস্যু আজকের বিশ্ব রাজনীতির সবচেয়ে জটিল ও বিতর্কিত বিষয়গুলোর একটি। কয়েক দশক ধরে চলমান এই সংকট শুধু মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে নয়, বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্যে গভীর ছাপ ফেলেছে। ফিলিস্তিন যেন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর কাছে নরবলির এক শিকার, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে।
পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর ভূমিকায় ফিলিস্তিন প্রশ্নে বরাবরই দ্বিচারিতা স্পষ্ট। মানবাধিকারের কথা বললেও বাস্তবে তারা ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর চলমান নিপীড়নকে নীরবে সমর্থন দিয়ে আসছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলকে রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করে চলেছে, যা ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগকে আরও গভীর করেছে। জাতিসংঘের বহু প্রস্তাবনা ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের পরও ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমা বিশ্ব তাদের সমর্থন অটুট রেখেছে। এর পেছনে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদ, সামরিক প্রভাব বিস্তার এবং ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত স্বার্থ।
ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল, বসতি স্থাপন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে এলেও পশ্চিমা বিশ্ব এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামকে তারা সন্ত্রাসবাদ আখ্যা দিয়ে ইসরায়েলের আগ্রাসনকে বৈধতা দিয়ে আসছে। ফিলিস্তিন যেন এক অবিরাম সংঘাতের মঞ্চ, যেখানে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর অস্ত্র ব্যবসা, ভৌগোলিক আধিপত্য এবং ক্ষমতার খেলা অব্যাহত রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপ শুধু ফিলিস্তিন নয়, গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ধ্বংস করেছে। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেনের মতো দেশগুলোতে যুদ্ধ ও অস্থিরতার পেছনেও এই শক্তিগুলোর ভূমিকাই মূল চালিকাশক্তি। ফিলিস্তিন ইস্যুকে তারা কেবল একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে, যার মাধ্যমে তারা একদিকে ইসরায়েলকে আঞ্চলিক ভূখণ্ডে শক্তিশালী রাখছে, অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বে বিভাজন সৃষ্টি করছে।
ফিলিস্তিনের জনগণ কয়েক দশক ধরে নিপীড়ন সহ্য করলেও তাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ম্লান হয়নি। ইন্তিফাদা আন্দোলন থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক প্রতিরোধ—সবই প্রমাণ করে যে ফিলিস্তিনিরা তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের প্রশ্নে আপসহীন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি সত্যিই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চায়, তবে ফিলিস্তিন ইস্যুতে দ্বৈতনীতি পরিহার করে জাতিসংঘের গৃহীত প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
ফিলিস্তিন যেন সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে এক অনন্ত বলির পাঠা, যার রক্ত ঝরিয়ে তারা নিজেদের আধিপত্য কায়েম রেখেছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, প্রতিটি সাম্রাজ্যের পতন অনিবার্য। হয়তো আজ নয়, কিন্তু ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনও তার স্বাধীনতার সূর্যোদয় দেখবে। এই ন্যায়ের সংগ্রামে বিশ্ববাসীর নৈতিক দায়িত্ব হলো নিপীড়িতের পাশে দাঁড়ানো এবং সাম্রাজ্যবাদী অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।