
মহাকাশ থেকে আসা রহস্যময় সংকেত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, তারা এই সংকেতের রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন। ২০২২ সালে রেডিও টেলিস্কোপের মাধ্যমে শনাক্ত করা একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণের সংকেত বিশ্লেষণ করে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। এই সংকেত পৃথিবী থেকে প্রায় ২০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের একটি গ্যালাক্সি থেকে এসেছে বলে জানানো হয়েছে।
এই বিস্ফোরণটি মাত্র কয়েক মিলিসেকেন্ড স্থায়ী হলেও এটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে এটি পুরো গ্যালাক্সিতে ছড়িয়ে পড়ার জন্য যথেষ্ট শক্তি ধারণ করেছিল। বিজ্ঞানীরা এই ধরনের সংকেতকে “দ্রুত রেডিও বিস্ফোরণ” বা এফআরবি (Fast Radio Burst) নামে অভিহিত করেন। এফআরবিগুলো মহাকাশের সবচেয়ে রহস্যময় ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হয়।
এমআইটির গবেষকদের মতে, এই সংকেতের উৎস একটি ঘূর্ণনশীল নিউট্রন নক্ষত্রের খুব কাছাকাছি অবস্থিত একটি ছোট এলাকা। নিউট্রন নক্ষত্র হলো সুপারনোভা বিস্ফোরণের পর অবশিষ্ট ঘন ও চৌম্বকীয় শক্তিসম্পন্ন বস্তু। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই নক্ষত্রের চারপাশে থাকা শক্তিশালী চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের স্তর, যাকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলা হয়, থেকে এই সংকেত উৎপন্ন হয়েছে।
এমআইটির বিজ্ঞানী কিয়োশি মাসুই ব্যাখ্যা করেন, “উচ্চ চৌম্বকীয় শক্তিসম্পন্ন নিউট্রন নক্ষত্র, যাকে ম্যাগনেটার বলা হয়, তার চারপাশে পরমাণু থাকতে পারে না। চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের প্রভাবে পরমাণুগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমরা দেখতে পেয়েছি যে, উৎসের কাছাকাছি এই চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মধ্যে সঞ্চিত শক্তি রেডিও তরঙ্গ হিসেবে মহাবিশ্বের অর্ধেক পথ পাড়ি দিতে সক্ষম।”
ম্যাগনেটারগুলো সাধারণত আমাদের সূর্যের আকারের প্রায় ৭ থেকে ১৯ গুণ ভরের একটি তারা সুপারনোভা বিস্ফোরণের পর তৈরি হয়। এই নিউট্রন নক্ষত্রগুলো অত্যন্ত ঘন এবং শক্তিশালী চৌম্বকীয় ক্ষেত্র ধারণ করে, যা মহাকাশে অস্বাভাবিক ঘটনার জন্ম দিতে পারে।
এমআইটির বিজ্ঞানীরা শুধু ২০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের সংকেতই শনাক্ত করেননি, তারা পৃথিবীর নিজস্ব গ্যালাক্সি থেকে ৮০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে ঘটে যাওয়া আরেকটি তীব্র বিস্ফোরণও শনাক্ত করেছেন। এই আবিষ্কারগুলো মহাকাশের রহস্য বুঝতে এবং মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও বিবর্তন সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রদান করতে সাহায্য করছে।
মহাকাশ থেকে আসা এই রহস্যময় সংকেতগুলোর উৎস এবং প্রকৃতি বোঝা বিজ্ঞানীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু মহাবিশ্বের গঠন এবং এর মধ্যে ঘটে যাওয়া জটিল প্রক্রিয়াগুলো বুঝতেই সাহায্য করে না, বরং ভবিষ্যতে অন্যান্য মহাজাগতিক ঘটনা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতেও সাহায্য করতে পারে। এমআইটির এই গবেষণা মহাকাশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মহাকাশের রহস্য উন্মোচনে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করে চলেছেন। এমআইটির বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা দ্রুত রেডিও বিস্ফোরণ বা এফআরবির উৎস এবং এর পেছনের বিজ্ঞান সম্পর্কে আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে। এই আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় আবিষ্কারের দিকে নিয়ে যেতে পারে।