
নাসার PACE (Plankton, Aerosol, Cloud, ocean Ecosystem) মিশন গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এ উৎক্ষেপণের পর থেকে এক বছর পূর্ণ করেছে। এই মিশনটি পৃথিবীর সমুদ্রের স্বাস্থ্য, বায়ুর গুণমান এবং জলবায়ুর উপর নজর রাখছে, যা আমাদের গ্রহের পরিবেশ বোঝার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ৬৭৬ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই উপগ্রহটি সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডলের মধ্যে কার্বনের চলাচলের তথ্য সংগ্রহ করছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশের ভারসাম্য বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
PACE মিশনের মূল লক্ষ্য হলো সমুদ্রের ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন, বায়ুমণ্ডলের এয়ারোসল এবং মেঘের গঠন ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা। এই উপাদানগুলো পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন, যেমন, সমুদ্রে কার্বন শোষণ করে এবং অক্সিজেন উৎপাদন করে, যা আমাদের গ্রহের শ্বাস-প্রশ্বাসের একটি অপরিহার্য অংশ। এছাড়া, এয়ারোসল এবং মেঘের মিথস্ক্রিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
যন্ত্রপাতি ও তাদের কাজ
PACE-এর তিনটি প্রধান যন্ত্র—OCI (Ocean Color Instrument), HARP2 (Hyper-Angular Rainbow Polarimeter 2), এবং SPEXone (Spectro-Polarimeter for Planetary Exploration)—প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে।
-
OCI: সমুদ্রের রঙ বিশ্লেষণ করে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের প্রকার ও ঘনত্ব নির্ধারণ করে।
-
HARP2: বায়ুমণ্ডলের এয়ারোসল এবং মেঘের বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করে।
-
SPEXone: এয়ারোসলের পোলারাইজেশন বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে, যা জলবায়ু মডেলিংয়ে সহায়তা করে।
PACE-এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হলো সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডলের মধ্যে কার্বনের আদান-প্রদানের তথ্য সংগ্রহ। সমুদ্র পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কার্বন শোষক হিসেবে কাজ করে। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং এটি সমুদ্রের গভীরে সঞ্চিত হয়। PACE-এর তথ্য এই প্রক্রিয়ার গতিশীলতা বোঝার জন্য নতুন আলোকপাত করছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নীতি নির্ধারণে সহায়ক হবে।
PACE শুধু জলবায়ু নিয়ে কাজ করছে না, এটি বায়ুর গুণমানও পর্যবেক্ষণ করছে। এয়ারোসল, যেমন ধুলো, ধোঁয়া এবং দূষণকারী কণা, জনস্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। PACE-এর তথ্য বিজ্ঞানীদের এই কণাগুলোর উৎস, বিস্তার এবং প্রভাব বোঝার সুযোগ দিচ্ছে, যা দূষণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
PACE-এর প্রথম বছরের তথ্য ইতিমধ্যেই বিজ্ঞানীদের জন্য একটি সম্পদ। এই তথ্য দীর্ঘমেয়াদে জলবায়ু মডেল উন্নত করতে, সমুদ্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় কৌশল তৈরিতে এবং বায়ুর গুণমান উন্নত করতে সহায়তা করবে। এই মিশনটি আমাদের গ্রহের জটিল পরিবেশ ব্যবস্থা বোঝার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।