বিশ্ব আলাপ

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থা সংকট: রাষ্ট্র কি সঠিক পথে আছে?

(আল মামুন রিটন, দীপ্তদেশ) গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি জনগণের আস্থা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। যখন কোনো রাষ্ট্রে জনগণ এই মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস হারাতে শুরু করে, তখন তা শুধু রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য নয়, গোটা রাষ্ট্র কাঠামোর জন্যই বিপজ্জনক বার্তা বহন করে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রকৃত শক্তি নিহিত থাকে জনগণের সম্মতি ও বিশ্বাসে। তাই, যখন নাগরিক সমাজ সরকারের সিদ্ধান্ত, বিচারিক কার্যক্রম, নির্বাচন প্রক্রিয়া কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনার সার্বিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন সেটিকে হালকাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। বরং এই আস্থাহীনতার পেছনের কারণগুলো অনুধাবন করা এবং তা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতার একটি বড় কারণ হলো—প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও স্বচ্ছতার অভাব। যদি জনগণ দেখে যে, রাষ্ট্রযন্ত্র কেবলমাত্র নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করছে, তখন তাদের মনে অসন্তোষ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান—এই সবগুলো বিষয় একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ। যদি এগুলোর কোনো একটি ক্ষেত্রেও ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়, জনগণের আস্থা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

একই সঙ্গে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারও গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দেয়। রাষ্ট্র যদি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় ব্যর্থ হয়, যদি রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব থাকে এবং জনগণের প্রশ্নের জবাবদিহিতা না থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই জনগণের মনে সরকারের প্রতি অবিশ্বাস দানা বাঁধে। এ ধরনের পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল চেতনাকে দুর্বল করে এবং নাগরিকদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করে।

একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে, জনগণের আস্থা অটুট রাখা। এর জন্য প্রয়োজন—রাজনৈতিক শুদ্ধাচার, শক্তিশালী গণমাধ্যম, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল প্রশাসন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং জনসাধারণের মতামতকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়াই একটি সফল গণতন্ত্রের ভিত্তি।

আজকের বিশ্বে যেসব রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ধরে রাখতে পেরেছে, তারা সুশাসন ও জবাবদিহিতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। অন্যদিকে, যেখানে এই মৌলিক নীতিগুলোর ব্যত্যয় ঘটেছে, সেসব দেশে গণতান্ত্রিক সংকট প্রকট হয়েছে। তাই, জনগণের আস্থা রক্ষায় রাষ্ট্রযন্ত্রকে সর্বদা সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায় গণতান্ত্রিক কাঠামো মুখোশে রূপ নেবে এবং জনগণের অবিশ্বাস রাষ্ট্রের অস্তিত্বকেই সংকটে ফেলতে পারে।

সুতরাং, জনগণের আস্থা যখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি নষ্ট হতে শুরু করে, তখন তা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে রাষ্ট্র সঠিক পথে নেই। এই আস্থাহীনতা কাটিয়ে উঠতে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে।

আল মামুন রিটন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button