
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো একটি রহস্যময় ভবঘুরে গ্রহ-সদৃশ বস্তুর আবহাওয়ার বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। SIMP 0136+0933 নামের এই বস্তুটি কোনো তারার চারপাশে ঘোরে না, তাই এটিকে ঐতিহ্যগত গ্রহ বলা যায় না। তবে এর ভর ব্রাউন ডোয়ার্ফ বা “ব্যর্থ তারা”র তুলনায়ও কম, যা এটিকে একটি অনন্য মহাজাগতিক বস্তুতে পরিণত করেছে। ৩ মার্চ, ২০২৫-এ “দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিকাল জার্নাল লেটার্স”-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে যে এই বস্তুর বায়ুমণ্ডলে মেঘের স্তর, কার্বনযুক্ত রাসায়নিক উপাদান এবং উচ্চতায় অবস্থিত অরোরার উপস্থিতি রয়েছে।
SIMP 0136+0933 পৃথিবী থেকে ২০ আলোকবর্ষ দূরে ক্যারিনা নেবুলায় অবস্থিত। এর একটি দিন মাত্র ২.৪ ঘণ্টার, এবং এটি উত্তর গোলার্ধের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল মুক্তভাবে ভাসমান গ্রহ-ভরের বস্তু হিসেবে পরিচিত। কাছাকাছি কোনো তারার অনুপস্থিতির কারণে এটি পর্যবেক্ষণের জন্য আদর্শ। গবেষণার প্রধান লেখক অ্যালিসন ম্যাককার্থি, বোস্টন ইউনিভার্সিটির একজন স্নাতক ছাত্রী, বলেছেন, “এই বস্তুটির বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত জটিল এবং স্তরবিশিষ্ট, যা আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলোর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।”
গবেষকরা JWST-এর নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকট্রোগ্রাফ এবং মিড-ইনফ্রারেড ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করে ২৩ জুলাই, ২০২৩-এ প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে এই বস্তু থেকে নির্গত ইনফ্রারেড বিকিরণ পরিমাপ করেছেন। তারা প্রায় ৬,০০০ ডেটাসেট সংগ্রহ করেছেন, যা থেকে আলোক বক্ররেখা তৈরি করা হয়েছে। এই বক্ররেখাগুলো দেখিয়েছে যে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে বিকিরণের তীব্রতা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। তিনটি স্বতন্ত্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য গুচ্ছ চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের উপস্থিতি নির্দেশ করে।
মডেলিংয়ের মাধ্যমে গবেষকরা অনুমান করেছেন যে প্রথম গুচ্ছটি নিম্নস্তরে থাকা লোহার মেঘ থেকে উৎপন্ন, দ্বিতীয়টি উচ্চস্তরে অবস্থিত ফরস্টারাইট মেঘ থেকে এবং তৃতীয়টি সম্ভবত বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে “হটস্পট” বা রেডিও অরোরা থেকে এসেছে। এই মেঘগুলো টুকরো টুকরো আকারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, যা বিকিরণের ওঠানামার কারণ হতে পারে।
এই আবিষ্কারটি ভবঘুরে গ্রহ বা অনুরূপ বস্তুর বায়ুমণ্ডলীয় গঠন ও গতিশীলতা সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে। JWST-এর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এই ধরনের দূরবর্তী এবং রহস্যময় বস্তুর গোপনীয়তা উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা আমাদের মহাবিশ্বের বৈচিত্র্য সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে সাহায্য করবে।