
লাইলাতুল কদর ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী বছরের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ রাত। পবিত্র কোরআনে এই রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই রাতে আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের সুবর্ণ সুযোগ থাকে। তবে লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারিত না হলেও হাদিসে কিছু নিদর্শনের উল্লেখ রয়েছে, যা দ্বারা এই মহিমান্বিত রাত চেনা সম্ভব।
প্রথমত, লাইলাতুল কদরের রাতে আকাশে বিশেষ শান্তি ও প্রশান্তির আবহ বিরাজ করে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এই রাতে আকাশে কোনো ঝড়-ঝঞ্ঝা বা অস্বাভাবিক প্রকৃতি দেখা যায় না। বাতাস হবে মৃদু, শীতল ও মনোরম। আবহাওয়া হবে শান্ত এবং এই রাতে কোনো বন্য জন্তু বা পাখির অস্বাভাবিক আওয়াজ শোনা যায় না।
দ্বিতীয়ত, এই রাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আলামত হলো সূর্যোদয়ের সময়। হাদিসে এসেছে, লাইলাতুল কদরের পরদিন সকালে সূর্যের আলো হবে কোমল ও মৃদু, যা চোখে কোনো প্রখরতা সৃষ্টি করবে না। সাধারণত, সূর্য হবে লালচে আভাযুক্ত এবং এর কিরণ হবে মৃদু, যা অন্য দিনের মতো তীব্র হবে না।
তৃতীয়ত, এই রাতে বিশেষ এক প্রশান্তি অনুভূত হয়। যারা ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকেন, তারা হৃদয়ে এক স্বর্গীয় শান্তি ও প্রশান্তির অনুভূতি লাভ করেন। শয়তানের কুমন্ত্রণা কমে যায় এবং মুমিনদের অন্তর আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকে।
চতুর্থত, এই রাতে ফেরেশতারা পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং সকাল পর্যন্ত তারা মানুষের জন্য শান্তি কামনা করেন। কোরআনের সূরা কদরে বলা হয়েছে, “এই রাতে ফেরেশতারা ও জিবরাইল (আ.) পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং এটি ফজর পর্যন্ত শান্তি।”
পঞ্চমত, লাইলাতুল কদরের রাতে ইবাদত করলে বিশেষ ফজিলত ও সওয়াব লাভ হয়। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান ও প্রত্যাশার সঙ্গে ইবাদত করবে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারি ও মুসলিম)
এই আলামতগুলো লক্ষ্য করে লাইলাতুল কদর চেনা সম্ভব। তবে ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী, রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলো বিশেষভাবে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটানো উচিত, কারণ এই রাতগুলোর যেকোনো একটিতে লাইলাতুল কদর নিহিত থাকতে পারে। অতএব, লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও বরকত লাভের জন্য মুসলমানদের উচিত রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি ইবাদত করা এবং আল্লাহর রহমত কামনা করা।