জ্যোতির্বিজ্ঞান

৯ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের ব্লাজারে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল জোড়ার সন্ধান

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় মহাকাশবিজ্ঞানীরা এমন এক বিরল আবিষ্কারের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যা আমাদের মহাবিশ্বে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে নতুন জানার সুযোগ এনে দিতে পারে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ব্লাজার PKS 2131-021–এর কেন্দ্রে একটি নয়, বরং দুটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল রয়েছে, যারা একে অপরকে ঘিরে প্রতি দুই বছরে একবার পরিভ্রমণ করছে।

প্রায় প্রতিটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল বিদ্যমান, যাদের ভর সূর্যের চেয়ে কয়েক মিলিয়ন থেকে কয়েক বিলিয়ন গুণ বেশি। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এসব বিশাল ব্ল্যাক হোল একাধিক ছোট ব্ল্যাক হোল একীভূত হওয়ার ফলে সৃষ্টি হয়েছে। তবে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের যুগল তথা বাইনারি সিস্টেম খুবই বিরল এবং পর্যবেক্ষণ করা কঠিন।

এই আবিষ্কৃত জোড়ার কক্ষপথের ব্যাস পূর্বে শনাক্ত একমাত্র সুপারম্যাসিভ বাইনারির তুলনায় ১০ থেকে ১০০ গুণ ছোট। এরা প্রায় ১০,০০০ বছরের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে—যা মহাজাগতিক সময়ের বিচারে খুবই অল্প সময়।

PKS 2131-021 হলো একটি ব্লাজার—এমন একটি ব্ল্যাক হোল যার গ্যাস-জেট পৃথিবীর দিকে মুখ করা বলে এটি অত্যন্ত উজ্জ্বল দেখায়। এটি প্রায় ৯ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। ক্যালটেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা গত ১৩ বছর ধরে এটি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং লক্ষ্য করেছেন যে, এর উজ্জ্বলতা ঘড়ির মতো নিয়মিত ওঠানামা করে।

গবেষকরা মনে করছেন, এই নিয়মিততা একটি দ্বিতীয় ব্ল্যাক হোলের উপস্থিতির ফল। দুটি ব্ল্যাক হোল একে অপরকে আকর্ষণ করে এবং কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে এমন ছন্দময় উজ্জ্বলতা তৈরি করে।

গবেষক দল কেবল সাম্প্রতিক তথ্যেই থেমে থাকেননি। তারা ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণাগারের সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান ও হেইস্ট্যাক অবজারভেটরি। সব তথ্য একত্র করে তারা নিশ্চিত হন যে এই উজ্জ্বলতার ওঠানামা কোনো এলোমেলো ঘটনা নয় বরং দীর্ঘমেয়াদী একটি কক্ষপথগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত।

নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী জোসেফ লাজিও বলেন, “এটি ধৈর্য ও ধারাবাহিকতার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। ৪৫ বছরের রেডিও পর্যবেক্ষণ ছাড়া এই ফলাফল সম্ভব হতো না।”

এই আবিষ্কার যদি সত্যি হয়, তবে এটি হবে দ্বিতীয় সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল জোড়া, যা সংঘর্ষের পথে রয়েছে। পরবর্তী ধাপে, বিজ্ঞানীরা এই সিস্টেম থেকে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ (gravitational waves) শনাক্ত করার চেষ্টা করবেন। উল্লেখ্য, প্রথম ব্ল্যাক হোল জোড়ার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ ২০১৬ সালে শনাক্ত করা হয়েছিল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button