কবিতাসাহিত্যসাহিত্য আলাপ

চিরন্তন প্রেরণার আলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

চিরন্তন প্রেরণার আলো”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিবস উপলক্ষে সম্পাদকীয়

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিবস বাঙালির কাছে শুধু একটি তারিখ নয়, এটি একটি উৎসব, একটি আত্মিক জাগরণের মুহূর্ত। আজ, তাঁর ১৬৪তম জন্মবার্ষিকীতে, দীপ্তদেশ পত্রিকার পক্ষ থেকে আমরা এই মহান স্রষ্টার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা, অকৃত্রিম ভালোবাসা ও অসীম কৃতজ্ঞতা। রবীন্দ্রনাথ শুধু একজন কবি, সাহিত্যিক বা দার্শনিক নন; তিনি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির এক অমর প্রতীক, যাঁর সৃষ্টি ও চিন্তাধারা বিশ্বমানবতার কাছে আজও প্রাসঙ্গিক।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের এক অতুলনীয় রত্ন। তাঁর কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ—প্রতিটি সৃষ্টি মানুষের মনের গভীরতম স্পন্দনকে ছুঁয়েছে। ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’র জন্য নোবেল পুরস্কার লাভের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর রচনায় প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, ভালোবাসার সূক্ষ্মতা, সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, আর আত্মার মুক্তির সাধনা অপূর্বভাবে ফুটে উঠেছে। ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত’ আজও আমাদের আনন্দে, বিষাদে, প্রেমে ও প্রকৃতির সান্নিধ্যে সঙ্গী হয়ে থাকে। তাঁর নাটক ও গদ্যে সমাজের প্রতি তাঁর গভীর দায়বদ্ধতা এবং মানবতার প্রতি অগাধ বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়।

রবীন্দ্রনাথ শুধু একজন সাহিত্যিকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক। তাঁর প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন আজও সৃজনশীল শিক্ষার এক অনন্য প্রতীক। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিক্ষা হওয়া উচিত মুক্তচিন্তার আলোয় আলোকিত, যা মানুষের সৃজনশীলতা ও সংবেদনশীলতাকে জাগিয়ে তোলে। তাঁর চিন্তাধারায় মানবতা, সাম্য ও স্বাধীনতার বাণী প্রতিধ্বনিত হয়। তিনি সাম্প্রদায়িকতা, জাতিগত বিভেদ ও সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত কবিতা “যেখানে মন মুক্ত, যেখানে মাথা উঁচু” এই স্বপ্নই তিনি দেখতেন—একটি মুক্ত, সৃজনশীল ও সুন্দর বিশ্বের।

আজকের বিশ্বে, যখন আমরা সামাজিক বিভেদ, পরিবেশ ধ্বংস, এবং মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের মুখোমুখি, রবীন্দ্রনাথের দর্শন ও সৃষ্টি আমাদের জন্য পথপ্রদর্শক। তাঁর রচনা আমাদের শেখায় প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের গুরুত্ব, সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তা, এবং মানুষের মধ্যে সহানুভূতি ও সম্প্রীতির মূল্য। তাঁর গান “আমার সোনার বাংলা” বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হয়ে তাঁর সৃষ্টির সর্বজনীনতা প্রমাণ করেছে। তাঁর সাহিত্য ও দর্শন আমাদের শুধু অতীতের স্মৃতি নয়, বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্যও এক অমূল্য সম্পদ।

রবীন্দ্রনাথের জন্মদিবসে আমরা, দীপ্তদেশ পত্রিকার পক্ষ থেকে, তাঁর আদর্শকে ধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। তাঁর সৃষ্টি ও চিন্তাধারা আমাদের প্রেরণা জোগাক, আমাদের সমাজে সম্প্রীতি, সৃজনশীলতা ও মানবিক মূল্যবোধের আলো ছড়াক। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তাঁর সাহিত্যকর্ম ও দর্শনকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য, যাতে তারাও এই অমর স্রষ্টার আলোয় আলোকিত হতে পারে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের চিরন্তন প্রেরণা, চিরন্তন আলো। তাঁর জন্মদিবস আমাদের জন্য শুধু উদযাপনের দিন নয়, এটি আমাদের আত্মমন্থনের, নিজেদের মানবিক সম্ভাবনাকে পুনরাবিষ্কারের দিন। আসুন, তাঁর সৃষ্টি ও আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে আমরা একটি সুন্দর, সহানুভূতিশীল ও সৃজনশীল বিশ্ব গড়ে তুলি। দীপ্তদেশ পত্রিকা এই মহান স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে এবং তাঁর স্মৃতিকে অমর করে রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। রবীন্দ্রনাথ আমাদের মাঝে চিরজাগ্রত থাকুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button