
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত বিশ্ব রাজনীতির একটি জটিল ও অমীমাংসিত ইস্যু হিসেবে রয়ে গেছে। এই সংঘাতের শিকড় প্রোথিত ঔপনিবেশিক ইতিহাসে, যেখানে পশ্চিমা শক্তিগুলোর ভূমিকা আজও প্রাসঙ্গিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সমর্থনে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে, অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমি, অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছে। এই নিবন্ধে আমরা সংঘাতের ঔপনিবেশিক মাত্রা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা এবং ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করব।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনি ভূমিতে জায়নবাদী প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়। ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের সমাপ্তির পর পশ্চিমা শক্তিগুলো ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের পথ প্রশস্ত করে। এই বিভাজন ফিলিস্তিনি জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে করা হয়েছিল, যা আজও অস্থিরতার মূল কারণ।
ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার পর থেকে লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তাদের বাড়িঘর দখল করে নেওয়া হয়েছে এবং তাদের উপর সামরিক শাসন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ, অবরোধ ও সামরিক হামলা ফিলিস্তিনিদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এই নীতিগুলো সরাসরি ঔপনিবেশিক দখলকৌশলের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যেখানে একটি শক্তি স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে উৎখাত করে তাদের ভূমি দখল করে।
জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো বারবার ফিলিস্তিনিদের অধিকারের কথা বললেও বাস্তবে ইসরায়েলের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর ইসরায়েলকে বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দেয়, যা গাজায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধকে “সন্ত্রাসবাদ” আখ্যা দিয়ে তাদের ন্যায্য সংগ্রামকে অপরাধীকার করা হচ্ছে।
এই দ্বিচারিতা স্পষ্ট হয় যখন পশ্চিমা নেতারা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন, কিন্তু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে নীরব থাকেন। এটি প্রমাণ করে যে আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়বিচার শুধু শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থেই প্রযোজ্য।
ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে—সশস্ত্র প্রতিরোধ থেকে শুরু করে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা পর্যন্ত। তবে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ও পশ্চিমা সমর্থনের কারণে তাদের সংগ্রাম ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ছে।
ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও একত্রিত প্রতিরোধের উপর। বিশ্ব সম্প্রদায় যদি সত্যিকার অর্থে ন্যায়বিচার চায়, তবে ইসরায়েলের উপর চাপ সৃষ্টি করে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও প্রত্যাবর্তনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুধু একটি ভূ-রাজনৈতিক বিবাদ নয়, এটি ঔপনিবেশিক শোষণের একটি ধারাবাহিকতা। পশ্চিমা শক্তিগুলোর সমর্থনে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব চলমান থাকলে এই অঞ্চলে শান্তি অসম্ভব। ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য দাবিকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের ভূমি থেকে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোই একমাত্র সমাধান।
ফিলিস্তিন শুধু একটি ভূখণ্ড নয়—এটি একটি জনগণের পরিচয়, সংগ্রাম ও স্বপ্নের নাম।