
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের শীর্ষ প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক ২০২৫ সালে তাদের অ্যালগরিদমে উল্লেখযোগ্য আপডেট এনেছে। এই আপডেটের মূল লক্ষ্য হলো স্প্যাম কার্যক্রম হ্রাস করা এবং ব্যবহারকারীদের জন্য নিরাপদ ও মানসম্মত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা। এই নতুন নীতি অনুসারে, পুনরাবৃত্তিমূলক মন্তব্য, একই পোস্টের অপরিবর্তিত শেয়ারিং, এবং এআই-জনিত কন্টেন্টের ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এই প্রবন্ধে ফেসবুকের নতুন নীতি, এর প্রভাব, এবং ব্যবহারকারীদের জন্য করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ফেসবুকের নতুন স্প্যাম নীতি
ফেসবুকের সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুযায়ী, নিম্নলিখিত কার্যক্রমগুলো স্প্যাম হিসেবে চিহ্নিত হবে:
- পুনরাবৃত্তিমূলক মন্তব্য: একই ব্যক্তি বা অ্যাকাউন্ট থেকে পরপর একই মন্তব্য একাধিকবার করা হলে তা স্প্যাম হিসেবে গণ্য হবে। এটি প্ল্যাটফর্মে অপ্রাসঙ্গিক এবং বিরক্তিকর কন্টেন্ট হ্রাস করার লক্ষ্যে করা হচ্ছে।
- একই পোস্টের অপরিবর্তিত শেয়ারিং: কোনো পোস্ট সম্পাদনা না করে একাধিক গ্রুপ বা পেজে শেয়ার করা হলে তাও স্প্যাম হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি ফেসবুকের অ্যালগরিদমে কন্টেন্টের গুণগত মান বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
- পাবলিক গ্রুপে অ-সদস্যদের পোস্ট: এমনকি পাবলিক গ্রুপেও, যদি কোনো ব্যক্তি গ্রুপের সদস্য না হয়ে পোস্ট বা মন্তব্য করেন, তবে ফেসবুকের নতুন অ্যালগরিদম তা স্প্যাম হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে। এটি গ্রুপের মধ্যে অপ্রাসঙ্গিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য গৃহীত হয়েছে।
- এআই-জনিত কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণ: ফেসবুক এআই-জনিত লেখা বা কন্টেন্ট সনাক্ত করতে সক্ষম এআই ফিল্টার ব্যবহার করছে। এই ধরনের কন্টেন্টের অতিরিক্ত ব্যবহার মনিটাইজেশন (যেমন, ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট, বা ব্লগ থেকে আয়) বাতিল করতে পারে। এছাড়া, এআই-জনিত পোস্টের নিচে শিগগিরই “AI Filtered” লেবেল যুক্ত হবে।
নতুন রিপোর্টিং সিস্টেম
ফেসবুক শিগগিরই একটি দ্রুত রিপোর্টিং সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সহজেই কোনো পোস্ট বা মন্তব্যকে স্প্যাম হিসেবে রিপোর্ট করতে পারবেন। এই ব্যবস্থা প্ল্যাটফর্মে স্প্যাম এবং অপ্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট দ্রুত সনাক্ত ও অপসারণে সহায়ক হবে। এটি গ্রুপ অ্যাডমিনদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ স্প্যাম কন্টেন্টের কারণে গ্রুপ ডিজেবল হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
ব্যবহারকারীদের উপর প্রভাব
এই নতুন নীতির কারণে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের, বিশেষ করে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এবং গ্রুপ অ্যাডমিনদের, বেশ কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে:
- কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য: যারা ফেসবুক পেজ বা প্রোফাইল থেকে মনিটাইজেশনের মাধ্যমে আয় করেন, তাদের জন্য এআই-জনিত কন্টেন্টের অতিরিক্ত ব্যবহার এড়ানো জরুরি। মূল এবং গুণগত মানসম্পন্ন কন্টেন্ট তৈরি করা মনিটাইজেশন বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য।
- গ্রুপ অ্যাডমিনদের জন্য: গ্রুপে স্প্যাম কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে। অ-সদস্যদের পোস্ট বা মন্তব্য সীমিত করা এবং নিয়মিত কন্টেন্ট পর্যালোচনা করা গ্রুপের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য: পুনরাবৃত্তিমূলক মন্তব্য বা শেয়ারিং এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়া, পাবলিক গ্রুপে পোস্ট করার আগে গ্রুপের সদস্য হওয়া নিরাপদ।
করণীয়
ফেসবুকের নতুন নীতি মেনে চলতে ব্যবহারকারীদের নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত:
- মূল কন্টেন্ট তৈরি করুন: এআই-জনিত কন্টেন্টের পরিবর্তে নিজের ভাষায় এবং সৃজনশীলভাবে কন্টেন্ট তৈরি করুন। এটি আপনার পোস্টের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে এবং মনিটাইজেশনের সম্ভাবনা রক্ষা করবে।
- পুনরাবৃত্তি এড়ান: একই মন্তব্য বা পোস্ট বারবার শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। প্রতিটি শেয়ারে কিছু সম্পাদনা বা বৈচিত্র্য যোগ করুন।
- গ্রুপের নিয়ম মেনে চলুন: পাবলিক গ্রুপে পোস্ট করার আগে গ্রুপের সদস্য হোন এবং গ্রুপের নিয়মকানুন পড়ে নিন।
- ফেসবুকের অফিসিয়াল সূত্র পরীক্ষা করুন: ফেসবুকের অফিসিয়াল ব্লগ বা হেল্প সেন্টারে নিয়মিত চোখ রাখুন। এছাড়া, ইউটিউবে নির্ভরযোগ্য চ্যানেল থেকে এই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
ফেসবুকের নতুন অ্যালগরিদম আপডেট এবং স্প্যাম নীতি প্ল্যাটফর্মের গুণগত মান উন্নত করার লক্ষ্যে গৃহীত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে, এটি ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। সতর্কতা ও সঠিক কৌশলের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা এই নীতি মেনে চলতে পারেন এবং ফেসবু97কের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারেন। গ্রুপ অ্যাডমিন এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য এখনই সময় নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করে নতুন নিয়মের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর। সচেতনতা এবং দায়িত্বশীল ব্যবহারই হবে ফেসবুকের এই নতুন যুগে সফলতার চাবিকাঠি।
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, ফেসবুক ব্লগ
সুন্দর পরামর্শ