জ্যোতির্বিজ্ঞানবিজ্ঞান আলাপ

মহাবিশ্বের নতুন রহস্য মিল্কি ওয়ের সুপার-আর্থ

আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? সম্প্রতি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি দল এই প্রশ্নের উত্তরে নতুন আলোকপাত করেছে। তারা আবিষ্কার করেছেন যে, আমাদের গ্যালাক্সিতে সুপার-আর্থ—পৃথিবীর চেয়ে বড় কিন্তু নেপচুনের চেয়ে ছোট গ্রহ—আগের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি সাধারণ হতে পারে। এই উত্তেজনাপূর্ণ আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে গ্র্যাভিটেশনাল মাইক্রোলেন্সিং নামের একটি অভিনব কৌশলের মাধ্যমে।

নাম শুনে মনে হতে পারে এগুলো পৃথিবীর মতো বাসযোগ্য গ্রহ। কিন্তু আসলে এটি শুধু তাদের আকার বোঝায়: পৃথিবীর চেয়ে বড়, নেপচুনের চেয়ে ছোট। এই গ্রহগুলোতে পানি, বায়ুমণ্ডল, বা জীবনের সম্ভাবনা আছে কিনা, তা এখনও আমরা জানি না। তবে হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণা বলছে, মিল্কি ওয়ের প্রতি তিনটি তারার একটিতে এমন একটি সুপার-আর্থ থাকতে পারে!

এতদিন আমরা যে সুপার-আর্থগুলো খুঁজে পেয়েছি, সেগুলো সাধারণত তাদের তারার খুব কাছে, সংক্ষিপ্ত কক্ষপথে থাকত। কিন্তু এবারের আবিষ্কৃত গ্রহটি তার তারা থেকে অনেক দূরে, প্রায় সূর্য ও বৃহস্পতির দূরত্বের মতো! এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য একটি বড় চমক, কারণ দূরবর্তী কক্ষপথে সুপার-আর্থের অস্তিত্ব আমরা আগে কল্পনাও করিনি।

এই আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে গ্র্যাভিটেশনাল মাইক্রোলেন্সিং কৌশল। এটি কাজ করে একটি বিশাল ম্যাগনিফাইং গ্লাসের মতো। যখন কোনো বড় বস্তু (যেমন, একটি তারা বা গ্রহ) পৃথিবী ও দূরবর্তী তারার মাঝ দিয়ে যায়, তখন তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সেই তারার আলোকে বড় করে দেখায়। এই কৌশলের সঙ্গে কোরিয়া মাইক্রোলেন্সিং টেলিস্কোপ নেটওয়ার্ক (KMTNet)-এর তথ্য—যা অস্ট্রেলিয়া, চিলি, ও দক্ষিণ আফ্রিকার টেলিস্কোপ থেকে সংগৃহীত—এই দূরবর্তী গ্রহ শনাক্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের সৌরজগৎ মহাবিশ্বের একটি সাধারণ নমুনা। কিন্তু এই আবিষ্কার বলছে, হয়তো আমরা ভুল! বৃহস্পতি বা শনির মতো বিশাল গ্রহের পরিবর্তে অন্যান্য তারকা-ব্যবস্থায় দূরবর্তী কক্ষপথে সুপার-আর্থ বেশি দেখা যায়। গবেষকরা বড় ডাটাবেসের তুলনা করে দেখেছেন, এই গ্রহগুলো আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি সাধারণ। তাদের বিশ্লেষিত নমুনা আগের গবেষণার তুলনায় তিন গুণ বড়, এবং এতে অনেক ছোট গ্রহও রয়েছে, যেগুলো আগে কেউ লক্ষ্য করেনি।

এই গ্রহগুলোতে সমুদ্র, বায়ুমণ্ডল, বা জীবনের সম্ভাবনা আছে কিনা, তা জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। হয়তো এগুলো মরুভূমির মতো নির্জন, বা প্রাথমিক জীবনের আবাসস্থল—কিছুই এখনও নিশ্চিত নয়। তবে এই আবিষ্কার মহাবিশ্বের গ্রহ গঠনের ধারণাকে নতুনভাবে সাজাচ্ছে। গবেষকদের ভাষায়, “একটি মাইক্রোলেন্সিং ঘটনার মাধ্যমে গ্রহ খুঁজে পাওয়া যেন সুঁচের গাদায় সুঁচ খোঁজার মতো।” তবুও, তারা সেখানে রয়েছে, আমাদের অপেক্ষায়!

– আল মামুন রিটন, সূত্র: NASA

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button