
মানবতা
বিশ্বজিৎ মানিক
মানুষ মাটির দেহে তৈরি আকাশের সন্তান,
তার অন্তরে প্রোথিত সত্যের বীজ
সঞ্চারিত করুণ প্রেমরসে।
সব ধর্ম, সব শাসন ও সৃষ্টি মানুষের মননে জন্ম,
তাই মনুষ্যত্বের চেয়ে বড় কিছু নয়—
কৃত্রিম কোনো ধ্যানধারণা।
জগতে ধর্মযুদ্ধ, জাতিহিংসা, শক্তির নামে অবিচার
সবই সত্য হয়— যখন নিভে যায় মানবতার মশাল।
সময়ে পাহাড় ভাঙে, সভ্যতার পতাকা ঝরে ধূলিকণায়,
তবুও মানুষ বেঁচে থাকে তার মানবিকতায়—
নীরবে, অবিচলরূপে, মহাকালের মন্দিরে,
অথবা মুকুটহীন সত্য মানবতার অবিরল ধ্বনি সোচ্চারে।
ফিকে হয়ে যায় স্বপ্নের গ্রহ
বিশ্বজিৎ মানিক
তোমার দুচোখে আমি সকাল খুঁজতাম,
তোমার হাসির শব্দে দিন গুনতাম।
ভেবেছিলাম, দুজনে মিলে একটা গ্রহ হব—
যেখানে ঝড় এলে আলিঙ্গনে জড়িয়ে থাকব।
তুমি জল হলে আমি তৃষ্ণা হতে চেয়েছিলাম,
তুমি রোদ হলে আমি মেঘ।
তুমি ফুল হলে আমি ভ্রমর—
ছুঁয়ে যেতাম, গন্ধে ভরে যেত আকাশ।
তুমি চলে গেলে— আমি বুঝলাম,
মানুষ কখনও গ্রহ হতে পারে না।
এই পৃথিবীর পুরোটাই যদি কেউ হয়ে যায়,
তবে নিজেকে খুঁজে পাবে না নিজের আয়নায়।
ভেতরের মাঠে বৃষ্টি আসে না
বিশ্বজিৎ মানিক
দিনের পর দিন, অনেকদিন হল
কেউ খোঁজ রাখে না আমার।
নিজের ছায়াও যেন দূরে সরে যায় রোজ,
যখন আয়নায় মুখ দেখি, চিনতে পারি না।
সবকিছু ঠিকঠাক— বলে যাই মুখে,
অথচ ভেতরে জমে থাকে অনুচ্চারিত কষ্ট।
চারপাশে বিচিত্র মানুষের ভিড়,
তবু একলা হই অবসাদী সন্ধ্যায়।
মনে হয়, আমি একটা চৌচির মাঠ,
যেখানে কোনো স্বপ্নের বীজ জন্মায় না।
আমি শুধু চাই— কেউ এসে বলুক,
“তোমার জন্য আজ একটু বৃষ্টি এনেছি।”
সৃষ্টির পথে
বিশ্বজিৎ মানিক
তারা বলে, আমি ভুল।
আমি গাছ লাগাই, আকাশে রঙ মাখি।
তারা বিদ্রূপ হাসে—
আমি গল্প পড়ি, পুরনো অ্যালবামে হারিয়ে যাই।
তারা ঠোঁট বাঁকায়, আমি গান শুনি,
কোদাল হাতে মাটি খুঁড়ি।
তারা ব্যঙ্গ করে—
আমি পূজার আলোয় হৃদয় রাঙাই।
শেষ বিকেলে আমি জানি, আমি কে।
জানি, কে কোন মাপে মাপতে আসে।
তারা আমার ভুল খোঁজে,
আমি ততক্ষণে আরেকটা গাছ লাগাই।
ঈশ্বরী মা
বিশ্বজিৎ মানিক
মায়ের অস্তিত্ব খুঁজতে গিয়ে দেখি,
তিনি শুধু একটি শব্দ নন—
একটি সুবিস্তৃত, সহিষ্ণু আকাশ,
যেখানে ভালোবাসা অভ্র হয়ে ভাসে।
কোথায় নেই তিনি! সর্বস্থানে অধিষ্ঠিত—
হাতের স্পর্শে, চোখের কোণে, ঘুমপাড়ানি ওমে,
সকাল-সন্ধ্যা জোড়হাতে সন্তানের মঙ্গলপ্রার্থনায়।
তাঁর ভালোবাসার কোনো পরিমাপ নেই,
কোনো ব্যারোমিটার নেই মাপতে পারে।
আমি ঈশ্বরের মুখ দেখিনি,
কিন্তু মায়ের হাসিতে স্বর্গের আলো দেখি।
সেই আলোয় দেখি মমতাময়ী ঈশ্বরী মাকে।
পরিচিতি:
বিশ্বজিৎ মানিক ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম মহকুমার আমলীঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চবিদ্যালয় পড়াশোনার সময় থেকেই তার লেখালেখি শুরু হয়। বিভিন্ন অফলাইন ও অনলাইন ম্যাগাজিনে, সাহিত্য গ্রুপে এবং সংকলিত কাব্যগ্রন্থে তার লেখা নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। বর্তমানে সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার দায়িত্বও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন।