
১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপিত নাসার ভয়েজার ১ এবং ভয়েজার ২ মহাকাশযান এখনও মহাকাশের অজানা বিশালতায় মানবতার প্রতিনিধিত্ব করছে। এই দুটি যান বর্তমানে আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশে অবস্থান করছে, যেখান থেকে তারা আমাদের সৌরজগতের সীমানার বাইরের অভূতপূর্ব তথ্য পাঠাচ্ছে।
ভয়েজার ১ বর্তমানে পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫.৫ বিলিয়ন কিলোমিটার (১৫৮ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট) দূরে অবস্থিত। এটি ২০১২ সালে হিলিওপজ অতিক্রম করে আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশে প্রবেশ করে। এর দুর্বল সংকেত পৃথিবীতে পৌঁছাতে প্রায় ২৩ ঘণ্টা সময় লাগে।
ভয়েজার ২ পৃথিবী থেকে প্রায় ২১ বিলিয়ন কিলোমিটার (১৪০ এউ) দূরে রয়েছে। ২০১৮ সালে এটি আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশে প্রবেশ করে। এর সংকেত পৃথিবীতে পৌঁছাতে ১৯ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে।
উভয় যান মহাজাগতিক রশ্মি, চৌম্বক ক্ষেত্র এবং সৌর বায়ুর প্রভাব সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাঠাচ্ছে। এই তথ্য বিজ্ঞানীদের সৌরজগতের বাইরের পরিবেশ এবং আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম সম্পর্কে নতুন ধারণা দিচ্ছে। তবে, তাদের প্লুটোনিয়াম-২৩৮ চালিত শক্তির উৎস ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। নাসার বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, ২০২৫-২০৩০ সালের মধ্যে যান দুটির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হতে পারে।
প্রতিটি ভয়েজার যানে একটি ‘গোল্ডেন রেকর্ড’ রয়েছে, যা পৃথিবীর শব্দ, সঙ্গীত, ছবি এবং বার্তা বহন করছে। এটি কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর জন্য মানব সভ্যতার পরিচয়পত্র হিসেবে কাজ করবে।
ভয়েজার মিশন মানুষের অজানা অন্বেষণের অদম্য কৌতূহল ও প্রযুক্তিগত কৃতিত্বের একটি জ্বলন্ত প্রতীক। প্রায় পাঁচ দশক ধরে এই যানগুলো আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে চলেছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, শক্তি ফুরিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই যানগুলো আরও মূল্যবান তথ্য পাঠাতে থাকবে।
নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি (জেপিএল) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভয়েজার মিশনের এই অসাধারণ যাত্রা মানব ইতিহাসে চিরকাল অমর হয়ে থাকবে।
ভয়েজার মিশন সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য নাসার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা জেপিএলের তথ্যভাণ্ডার দেখুন।