
মহাকাশের অগণিত নক্ষত্রের মধ্যে কিছু এমনও আছে যারা তাদের রঙ, আকার ও আচরণে অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সম্প্রতি ইউরোপীয় সাউদার্ন অবজারভেটরির (ESO) জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এমনই এক অসাধারণ নক্ষত্র আবিষ্কার করেছেন, যা মহাকাশ গবেষণায় নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। এর নাম HD 45166—একটি নীল উল্কা-নক্ষত্র (Wolf-Rayet star), যা পৃথিবী থেকে প্রায় ৩,০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এটি তার চারপাশে একটি চমকপ্রদ নীল আভা ছড়িয়ে রেখেছে এবং প্রতি সেকেন্ডে ১,০০০ কিলোমিটার বেগে ঘুরছে, যা সাধারণ নক্ষত্রের তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ দ্রুত!
HD 45166 কোনো সাধারণ নক্ষত্র নয়। এটি একটি অতি-গরম, নীল উজ্জ্বল দানব, যার ভর সূর্যের চেয়ে প্রায় ২৫ গুণ বেশি। কিন্তু এর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো—এটি প্রচণ্ড গতিতে নিজের বাইরের স্তর মহাকাশে ছুঁড়ে ফেলছে, তৈরি করছে একটি বিশাল নীল গ্যাসের মেঘ। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি খুব দ্রুতই একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণের দিকে এগোচ্ছে, যা হয়তো আগামী কয়েক লক্ষ বছরের মধ্যে ঘটতে পারে।
এই নক্ষত্রটি এতটাই উজ্জ্বল যে, এটি আমাদের সূর্যের চেয়ে ৫ লক্ষ গুণ বেশি আলো বিকিরণ করে! কিন্তু এর আয়ু খুবই কম—মাত্র কয়েক মিলিয়ন বছর (সূর্যের আয়ুর তুলনায় যা একেবারেই নগণ্য)।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, HD 45166 সম্ভবত দুটি নক্ষত্রের সংঘর্ষের ফল। যখন দুটি নক্ষত্র একসাথে মিশে যায়, তখন তারা অসম্ভব গতিতে ঘূর্ণন শুরু করে—ঠিক যেমন একজন ফিগার স্কেটার হাত গুটিয়ে নিলে দ্রুত ঘুরতে থাকে। এই নক্ষত্রটির চৌম্বক ক্ষেত্রও অত্যন্ত শক্তিশালী, যা এর চারপাশে একটি অদৃশ্য শক্তির বলয় তৈরি করেছে।
এটি কি ভবিষ্যতে সুপারনোভা হয়ে বিস্ফোরিত হবে?
হ্যাঁ! Wolf-Rayet নক্ষত্রগুলো সাধারণত তাদের জীবন শেষ করে সুপারনোভা বা গামা-রে বিস্ফোরণ দিয়ে। এই বিস্ফোরণ এতটাই শক্তিশালী যে, এটি কাছাকাছি কোনো গ্রহের জীবন মুহূর্তেই ধ্বংস করে দিতে পারে। তবে, HD 45166 এখনও তার যৌবনে আছে, তাই এটি আমাদের জীবদ্দশায় ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
এই নক্ষত্রটি বিজ্ঞানীদের জন্য একটি জীবন্ত গবেষণাগার। এটি নক্ষত্রের বিবর্তন, চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাব এবং মহাকাশে ভারী ধাতু (লোহা, সোনা) কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে তা বুঝতে সাহায্য করবে। এছাড়াও, এটি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মতো উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে পর্যবেক্ষণের জন্য একটি আদর্শ লক্ষ্য।
HD 45166 আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মহাকাশ শুধু শান্ত ও স্থির নয়—এটি এক অগ্নিপিণ্ড, যেখানে নক্ষত্রের জন্ম, মৃত্যু এবং সংঘর্ষ প্রতি মুহূর্তে ঘটছে। এই নীল দানবটি যেন মহাকাশের মঞ্চে একা নাচছে, আর আমরা দর্শক হিসেবে তার শেষ অ্যাক্টের জন্য অপেক্ষা করছি।
আপনার কী মনে হয়? এই নক্ষত্রটি কি আপনার কাছে বিস্ময়কর নাকি ভয়ঙ্কর লাগছে? মন্তব্যে জানান!