
প্রতিটি রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বা স্তম্ভ—যেমন বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গণমাধ্যম এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সকল স্তম্ভ শুধু রাষ্ট্রকে গঠনই করে না, বরং একটি জাতির নৈতিকতা, সভ্যতা ও উন্নয়নের মানদণ্ড নির্ধারণ করে। এই স্তম্ভগুলো যদি স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং নৈতিক মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত হয়, তবে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রেই দেখা দেয় চরম দুর্বলতা। বিচারব্যবস্থায় যদি পক্ষপাত ও দুর্নীতি প্রবেশ করে, তাহলে সমাজে ন্যায়বিচার হারিয়ে যায়, জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়। প্রশাসনে যদি ঘুষ ও স্বজনপ্রীতির বিস্তার ঘটে, তাহলে ন্যায্যতা ও সুযোগের সমতা ভেঙে পড়ে। শিক্ষায় যদি মেধার পরিবর্তে সনদ আর কোচিং নির্ভরতা বেড়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হারায় সৃজনশীলতা ও নেতৃত্বের সক্ষমতা। স্বাস্থ্য খাতে যদি অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও লোভ ঢুকে পড়ে, তাহলে নাগরিকরা পায় না মৌলিক চিকিৎসাসেবা। গণমাধ্যম যদি সত্য নয়, প্রভাবিত খবর প্রচারে ব্যস্ত থাকে, তবে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হারায় বিশ্বাসযোগ্যতা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি নিরপেক্ষ না থেকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তবে নিরাপত্তার পরিবর্তে আতঙ্ক বাড়ে। এসব স্তম্ভ পরিচ্ছন্ন না থাকলে রাষ্ট্রে জন্ম নেয় বিশৃঙ্খলা, অনাস্থা, নৈতিক পতন ও অব্যবস্থাপনার বিস্তার, যা ধীরে ধীরে দেশকে ধসিয়ে দেয় অগ্রগতির বদলে অনিশ্চয়তার অতল গহ্বরে। তাই একটি রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন এসব স্তম্ভের নিরবচ্ছিন্ন শুদ্ধতা, জবাবদিহি এবং নৈতিক দৃঢ়তা নিশ্চিত করা, যেখানে নেতৃত্ব, নীতি ও ন্যায় এক সুতোয় গাঁথা থাকবে—তবেই গড়ে উঠবে একটি সত্যিকারের উন্নত ও মর্যাদাশীল জাতি।