
বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি আমাদের সৌরজগতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং রোমাঞ্চকর আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছেন। তারা নেপচুনের কক্ষপথের অনেক দূরে, সৌরজগতের একদম প্রান্তে একটি নতুন বামন গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন। এই আবিষ্কার সৌরজগতের দূরবর্তী, বরফময় অঞ্চলের রহস্য উন্মোচনে আরও একটি বড় পদক্ষেপ।
সৌরজগতের অষ্টম এবং সর্বশেষ গ্রহ নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে রয়েছে বিশাল একটি অঞ্চল, যা কুইপার বেল্ট এবং স্ক্যাটার্ড ডিস্ক নামে পরিচিত। এই অঞ্চলটি অসংখ্য বরফময় বস্তু, ছোট গ্রহাণু এবং বামন গ্রহের আবাসস্থল। প্লুটো, যা একসময় নবম গ্রহ হিসেবে পরিচিত ছিল, সেটিও এই অঞ্চলেরই একটি বামন গ্রহ। বিজ্ঞানীরা অনেক বছর ধরে এই দূরবর্তী অঞ্চলটি অধ্যয়ন করছেন নতুন বস্তু সন্ধানের জন্য, যা সৌরজগতের গঠন ও বিবর্তন সম্পর্কে সূত্র দিতে পারে।
এই নতুন আবিষ্কৃত বস্তুটি একটি ‘বামন গ্রহ’ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বামন গ্রহ হলো এমন একটি মহাকাশীয় বস্তু যা:
১. সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
২. তার নিজস্ব মহাকর্ষের কারণে যথেষ্ট গোলাকার আকার ধারণ করে।
৩. এটি গ্রহ বা উপগ্রহ নয়।
৪. এটি তার কক্ষপথের চারপাশের অঞ্চলকে অন্যান্য বস্তু থেকে পরিষ্কার করতে পারেনি।
আবিষ্কৃত নতুন বামন গ্রহটি নেপচুনের কক্ষপথ থেকে এতটাই দূরে অবস্থিত যে এটি আমাদের টেলিস্কোপে অত্যন্ত ক্ষীণ দেখায়। এর সঠিক আকার, গঠন এবং কক্ষপথের বিশদ বিবরণ জানার জন্য আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা প্রাথমিক ডেটা বিশ্লেষণ করে এর অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছেন এবং এটি যে একটি বামন গ্রহের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।
এই নতুন বামন গ্রহের সন্ধান জ্যোতির্বিজ্ঞানের জন্য কয়েকটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
১. সৌরজগতের প্রান্তের রহস্য উন্মোচন: নেপচুন-পরবর্তী অঞ্চলটি এখনও আমাদের কাছে অনেকটাই অজানা। এই অঞ্চলের বস্তুগুলো সৌরজগতের আদিম উপাদান দিয়ে গঠিত বলে মনে করা হয়। নতুন বামন গ্রহ আবিষ্কার এই অঞ্চলের বস্তুগুলোর সংখ্যা, তাদের কক্ষপথের বিন্যাস এবং সৌরজগতের দূরবর্তী অংশের সামগ্রিক গঠন সম্পর্কে নতুন তথ্য সরবরাহ করবে।
২. ‘প্ল্যানেট নাইন’ সম্পর্কে সূত্র: বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরে কুইপার বেল্টের কিছু বস্তুর অস্বাভাবিক কক্ষপথ পর্যবেক্ষণ করছেন, যা দেখে মনে হয় সেখানে একটি বিশাল, অজানা গ্রহ (সম্ভাব্য ‘প্ল্যানেট নাইন’) লুকিয়ে আছে, যা এই বস্তুগুলোকে প্রভাবিত করছে। নতুন বামন গ্রহটির কক্ষপথ পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা হয়তো সেই অনুমানিক প্ল্যানেট নাইনের অস্তিত্ব বা অবস্থান সম্পর্কে আরও সূত্র পেতে পারেন।
৩. সৌরজগতের বিবর্তন বোঝা: দূরবর্তী এই বস্তুগুলো সৌরজগতের শুরুর দিকের পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য ধারণ করে। এই বামন গ্রহের উপাদান এবং কক্ষপথ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারবেন কীভাবে সৌরজগতের গ্রহগুলো গঠিত হয়েছিল এবং সময়ের সাথে সাথে কীভাবে তারা তাদের বর্তমান অবস্থানে এসেছে।
বিজ্ঞানীরা এখন এই নতুন বামন গ্রহটির গতিবিধি আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। এর সঠিক কক্ষপথ নির্ধারণের পর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন (IAU) এটিকে একটি আনুষ্ঠানিক নাম দেবে। এর আকার এবং ভর অনুমান করার জন্য আরও ডেটা বিশ্লেষণ করা হবে। এর গঠন সম্পর্কে জানার জন্য হয়তো ভবিষ্যতে কোনো মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনাও হতে পারে, যদিও তা অনেক দূর ভবিষ্যতের ব্যাপার।
সব মিলিয়ে, সৌরজগতের দূরতম প্রান্তে একটি নতুন বামন গ্রহের আবিষ্কার নিঃসন্দেহে জ্যোতির্বিজ্ঞানের জগতে একটি অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক ঘটনা। এটি আমাদের মহাবিশ্বের এই ক্ষুদ্র অংশ সম্পর্কে জানার আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং সৌরজগতের অজানা দিকগুলো উন্মোচনের পথ দেখাবে।