দীগন্ত আলাপ

গাজায় ক্ষুধার্ত জনতার ওপর গুলি – মানবিকতার পরাজয় ও বিবেকের প্রশ্ন

গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি জনতার ওপর গুলিবর্ষণের মতো হৃদয়বিদারক ঘটনা কেবল যুদ্ধের নিষ্ঠুরতাকেই নয়, মানবিকতার চূড়ান্ত পরাজয়কেই সামনে এনে দেয়। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে যথাযথভাবে “হৃদয়বিদারক” বলে বর্ণনা করেছে, কারণ এখানে শুধু তিনটি প্রাণের মর্মান্তিক মৃত্যুই নয়, বরং তা গোটা মানবতা ও সভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে মাসের পর মাস ধরে খাদ্য, পানি ও ওষুধের প্রবল সংকট চলছে। এমন এক পরিস্থিতিতে সামান্য ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে মানুষ গুলিতে নিহত হবে—এ দৃশ্য কেবল অমানবিক নয়, এটি যুদ্ধাপরাধেরও শামিল।

এই ঘটনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ, নির্বিচার বিমান হামলা, অবকাঠামো ধ্বংস এবং রাজনৈতিক উদাসীনতা। শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ লক্ষ লক্ষ মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না, আর তাদের এই বেঁচে থাকার আকুতির জবাব যদি হয় গুলি—তবে বিশ্ববিবেক কোথায়? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যারা মানবাধিকারের বড় বড় বুলি আওড়ায়, তাদের নীরবতা এই হত্যাকাণ্ডের নীরব সহযোদ্ধায় পরিণত হয়েছে। ত্রাণকেন্দ্রে ভিড় জমানো মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ শুধুমাত্র সামরিক আগ্রাসনের অংশ নয়, এটি রাজনৈতিক নিষ্ঠুরতার এক চরম উদাহরণ।

যারা এই ঘটনায় হতাহত হয়েছেন, তারা কোনো রাষ্ট্রের সৈনিক ছিলেন না, তারা ছিলেন ক্ষুধার্ত সাধারণ মানুষ—যাদের একমাত্র অপরাধ, তারা বেঁচে থাকতে চেয়েছিল। এই ঘটনা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিক—এটাই প্রত্যাশা। এখন সময় এসেছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কড়া ভূমিকা নেওয়ার। নইলে গাজা পরিণত হবে ইতিহাসের এক নীরব গণকবরে—যেখানে শুধু ক্ষুধা নয়, ন্যায়ের অভাবেও মানুষ মরবে।

বিশ্ব শান্তির দাবিদার রাষ্ট্রগুলো এবং মিডিয়ারও দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। এই ঘটনার বিস্তৃত তদন্ত এবং দোষীদের বিচার নিশ্চিত না হলে এই ধরনের বর্বরতা আরো বাড়বে, মানবতা আরো রক্তাক্ত হবে। গাজার ত্রাণকেন্দ্রে রক্তাক্ত এই দৃশ্য আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর গুলি চালানো সভ্যতার অন্তিম বিপর্যয়। এখনো যদি আমরা নিরুত্তর থাকি, তবে একদিন ইতিহাস আমাদেরকেই দোষারোপ করবে—মানবিকতা রক্ষায় দাঁড়াতে না পারার অপরাধে।

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button