
বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ রক্ষার প্রয়াসকে ঘিরে যেমন সচেতনতা বেড়েছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এক ধরনের পরিবেশবিরোধী মনোভাবও, যা শুধু উদ্বেগজনক নয়, বরং একে ঘিরে রয়েছে বহু দ্বন্দ্ব ও আত্মবিরোধিতাও। পরিবেশবিরোধী অনেক তৎপরতাই মুখে বলছে তারা ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পক্ষে, অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে তারা জ্বালানিখাতের মতো ক্ষতিকর শিল্পগুলোর জন্য সরকার থেকে বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি আদায়ের পক্ষেই দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, যা সরাসরি মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারনার বিরোধী। তারা বলছে, পরিবেশ সংরক্ষণের নামে সরকার অনাধিকার চর্চা করছে, অথচ নিজেরা সেই রাষ্ট্রযন্ত্রের হাত ধরে প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের অনুমোদনও নিচ্ছে।
আরেকটি বড় দ্বন্দ্ব দেখা যায় বিজ্ঞানের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের দৃষ্টিভঙ্গিতে। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ, গবেষণা ও বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীদের সর্বসম্মত মতামতকে তারা ‘আতঙ্কবাদ’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছে, অথচ যখন পরমাণু শক্তি কিংবা জেনেটিকালি পরিবর্তিত খাদ্যদ্রব্যের মতো বিষয় আসে, তখন তারাই বিজ্ঞানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এই দ্বিমুখী ব্যবহার তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
এছাড়াও, পরিবেশবাদী উদ্যোগকে তারা শহুরে অভিজাত শ্রেণির শখ বলে উপহাস করে, অথচ একই সময়ে তারা স্থানীয় সংস্কৃতি, মাটি, বনজঙ্গল ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার স্লোগানও তোলে। তারা নিজেদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করতে চায়, কিন্তু তা রক্ষার জন্য যে পরিবেশনীতি দরকার, তার বিরুদ্ধেই তারা লড়ে যায়। এই অবস্থানও এক ধরনের সাংস্কৃতিক দ্ব্যর্থতা সৃষ্টি করে।
এইসব দ্বন্দ্ব ও আত্মবিরোধিতা থেকে স্পষ্ট যে, পরিবেশবিরোধী মনোভাব আসলে কোনও সুসংগঠিত ভাবধারা নয়; বরং এটি এক ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রবণতা, যা মূলত উদারনৈতিক বা বৈশ্বিক চিন্তার বিরুদ্ধে এক প্রতিক্রিয়া হিসেবে গড়ে উঠেছে। তাই এদের বক্তব্য যতটা না যুক্তিসঙ্গত, তার চেয়ে বেশি মিশ্রিত হয়েছে বিভ্রান্তি, অসত্য প্রচার ও কর্পোরেট স্বার্থরক্ষা প্রবণতার সঙ্গে। এই প্রবণতা শুধু পরিবেশ রক্ষাকেই বাধাগ্রস্ত করছে না, বরং গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকারকেও হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।