
১. রঙের বন্ধু র
রঙের বন্ধু রে,
তুই বিহনে পরান আমার রয় না প্রাণে রে,
দিবানিশি চোখের জলে তোরেই খুঁজি রে।।
তোর প্রেমেতে ঘর ছেড়েছি,
কুল ও জাতির সব খেয়েছি।।
তুই ছাড়া মোর মনের ভুবন মরুভূমি রে।
রঙের বন্ধু রে,
তুই বিহনে পরান আমার রয় না প্রাণে রে,
দিবানিশি চোখের জলে তোরেই খুঁজি রে।।
সূর্য ছাড়া চাঁদ কখনও
আলো ছড়ায় না,
তুই বিহনে মনের জ্বালা
প্রাণে সয়ে না।।
ছাড়তে পারি ভবের মায়া,
বাবা-মায়ের স্নেহের ছায়া,
তুই ছাড়া মোর মনের স্বজন অন্য কেউ নাই রে।
রঙের বন্ধু রে,
তুই বিহনে পরান আমার রয় না প্রাণে রে,
দিবানিশি চোখের জলে তোরেই খুঁজি রে।।
রচনাকাল : ৫ মে, ২০২৫ খ্রি.
২. অনুরাগে মন দিয়েছি
ও সজনী রাই,
তুমি ছাড়া এই মনেতে কারো বসত নাই,
অনুরাগে মন দিয়েছি, মনটা তোমার চাই।।
তোমার জন্য মরতে পারি,
সাত সমুদ্র দেবো পাড়ি,
আগুন-জলে রঙ মাখাতে যদি পাশে পাই,
ও সজনী রাই,
তুমি ছাড়া এই মনেতে কারো বসত নাই,
অনুরাগে মন দিয়েছি, মনটা তোমার চাই।।
নীল আকাশটা ওই দিগন্তে
যেমন মিশে যায়,
তেমনি করে প্রাণ, সজনা,
তোমায় পেতে চায়।।
নীল নয়না, মনের ময়না,
থাকলে দূরে প্রাণে সয় না।।
তুমি ছাড়া এ জনমে আপন কেহ নাই,
ও সজনী রাই,
তুমি ছাড়া এই মনেতে কারো বসত নাই,
অনুরাগে মন দিয়েছি, মনটা তোমার চাই।।
রচনাকাল : ৬ মে, ২০২৫ খ্রি.
৩. নিশি রাইতে আমায় ডেকো না
নিশি রাইতে বন্ধু, আমায় একা ডেকো না,
তোমার ডাকে মনটা আমার ঘরে বসে না।
পাড়ার লোকে যদি দেখে
কলঙ্কের দাগ দেবে এঁকে,
বন্ধু আমার, রসিক নাগর, কেন বোঝো না?
নিশি রাইতে বন্ধু, আমায় একা ডেকো না,
তোমার ডাকে মনটা আমার ঘরে বসে না।।
একলা রাতে নিরজনে,
বিনোদিনী রাই,
দূরুদূরু ভীরু মনে,
ডরে মরে যাই।।
জোছনা ভরা নদীর ঘাটে আমায় ছুঁইও না,
কাঁচা যৌবন ভরা নদে তুফান তুলো না।।
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে,
মরে যাবো ভীষণ লাজে,
দোহাই লাগে, আড় নয়নে আমায় ছুঁইও না।
নিশি রাইতে বন্ধু, আমায় একা ডেকো না,
তোমার ডাকে মনটা আমার ঘরে বসে না।।
৪. তুমি ছাড়া স্বজন কেহ নয়
মনটা শুধু তোমার কথা কয়,
তুমি ছাড়া স্বজন কেহ নয়।
প্রেমের স্মৃতি যায় না ভোলা,
কষ্টের কথা যায় না বলা।
এত কাছে, তবু হারাবার ভয়—
তুমি ছাড়া স্বজন কেহ নয়।।
দিন-রজনী ভাবি তোমার কথা,
ভেবেই আমি সুখ খুঁজি রে সখা।
একটুখানি দূরে গেলে
বুকে ভেতর চিতা জ্বলে,
হিয়ার মাঝে কেমন যেন হয়—
তুমি ছাড়া স্বজন কেহ নয়।।
আমায় শূন্য করে যদি কারো হয়,
মরণ হবে—মিথ্যা কথা নয়।
তাই তো বলি প্রিয়া তোমায়—
এসো মিলি মন মোহনায়।
তোমার আমার প্রেম হবে না ক্ষয়—
তুমি ছাড়া স্বজন কেহ নয়।।
৫. সুখ পাখি
সুখ পাখিটা ধরা না যায়—
সর্বলোকে কায়।
দিবা-নিশি ভাবি তারে,
খুঁজিনিতো সত্যিকারে।
সবার মাঝে হায়—
সর্বলোকে কায়।।
কিভাবে যে এলাম ধরায়,
কিসের আশায় হায়?
হাতে রেখে নাটাইখানা,
শূন্যে উড়াই ঘুড়িখানা।
দমে দমে বায়—
সর্বলোকে কায়।।
ঘুরছি যে ঘূর্ণিপাকের বায়,
এই জগতের মায়া।
ষড়রিপুর মোহে পড়ে
পাপের ঘড়া পূর্ণ করে,
পার পাবে না দায়—
সর্বলোকে কায়।।
সুখ পাখিটা সবার সেবায়
ভীষণ খুশি পায়,
তাই সবারে বিভেদ ভুলে
ভালোবাসি মনটা খুলে,
থাকতে তাহার ছায়—
সর্বলোকে কায়।।
৬. প্রেমের পরশ
প্রেমের পরশ হৃদয় ছুঁয়ে যায়,
সেই পরশে মন রাঙাতে চায়।
ফাগুন বনে তোমার সনে
রঙ মেখেছি আজ দুজনে,
মন মানে না, স্বপ্ন বুনে যায়—
সেই পরশে মন রাঙাতে চায়।।
আজ ফাগুনে মাতাল হাওয়ায়
ঢেউ উঠেছে প্রেম-যমুনায়,
বইছে তুফান মনে
থাকতে তোমার সনে।
থাকলে দূরে মন মানে না হায়—
ঢেউ উঠেছে প্রেম-যমুনায়।।
মনের ভিটায় একটু দিও ঠাঁই,
তোমার মনে বসত করতে চাই।
রাধা-শ্যামে ভাসাই প্রেমের তরী,
তোমার জন্য ছাড়বো ভিটেবাড়ি।
প্রেম-বিহনে বাঁচা যে এক দায়—
তোমার মনে বসত করতে চাই।।
৭. নাটোর এসে বেড়ায় যান
দেশ-বিদেশের মানুষজন
নাটোর এসে বেড়ায় যান।
হালসা বিলে নৌকায় চড়ে,
প্রিয় সখার হাতটি ধরে,
শোন ভাটিয়ালি গান—
নাটোর এসে বেড়ায় যান।।
চলন বিল আর রাজবাড়ি
দেখে জুড়ায় যাবে প্রাণ।
বড়াইগ্রামের ড্রাগন ফল,
চলন বিলের মাছের ঝল,
এসে মন ভরিয়া খান—
নাটোর এসে বেড়ায় যান।।
মৌচাকের কাঁচাগোল্লা
পরান ভরে খান।
কুল, পেয়ারা, আম, লিচু—
চাইলে পাবেন আরও কিছু।
জানতে যদি চান—
নাটোর এসে বেড়ায় যান।।
বনলতার প্রেমকাহিনি,
আনার কানার গান,
রানী ভবানী ধনের কথা,
রাজপত্নীদের মনে ব্যথা,
শুনতে যদি চান—
নাটোর এসে বেড়ায় যান।।
খেজুর গুড়ের পাটালি
যদি একবার খান,
সাত জন্মে থাকবে মনে,
চাইবে খেতে মরণকালে।
যদি সময় পান—
নাটোর এসে বেড়ায় যান।।
কবি পরিচিতি :
রবি বাঙালি। প্রকৃত নাম মো. রবিউল আউয়াল। ১৯৭৫ সালে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নিতাইনগর গ্রামে জন্ম। তার একাডেমিক বহুগ্রন্থ বাংলাদেশ ও ভারত থেকে প্রকাশিত হয়েছে। সখের বশে সাহিত্যচর্চা করেন। তার লেখা খলিশাডাঙ্গার কন্যা, উলঙ্গ সভ্যতা, জাগো বসন্ত, জীবন বসন্ত গানে এবং মনের মানুষ কাব্যগ্রন্থসমূহ বিশেষভাবে সমাদৃত।