
অন্ধকারে ঢাকা এক রহস্যময় গ্রহ, যেখানে সূর্যের আলো কখনো পৌঁছায় না… কিন্তু এখানেই কি লুকিয়ে আছে প্রাণের স্পন্দন? মহাবিশ্বের এই ভবঘুরে গ্রহ, বা রোগ প্ল্যানেট কি হতে পারে এলিয়েন সভ্যতার ঠিকানা?
একটি গ্রহ… কিন্তু কোনো নক্ষত্র নেই। কোনো আলো নেই। শুধু মহাশূন্যের অসীম অন্ধকারে একাকী ভেসে চলা এক রহস্যময় যাত্রী। এ নয় কোনো সাধারণ গ্রহ। এ হলো রোগ প্ল্যানেট—মহাবিশ্বের ভবঘুরে, ছায়াপথের অজানা পথে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ানো এক বিস্ময়! আজ আমরা ডুব দেবো এই নিঃসঙ্গ গ্রহের রহস্যময় জগতে, যেখানে অন্ধকার শুধু রাজত্বই করে না, সেখানে লুকিয়ে আছে জীবনের সম্ভাবনা, এলিয়েন সভ্যতার সন্ধান! প্রস্তুত হন, এই ২০ মিনিটের যাত্রায় আমরা উন্মোচন করবো মহাবিশ্বের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর রহস্য!
আমাদের পৃথিবী সূর্যের আলোয় নৃত্য করে। কিন্তু রোগ প্ল্যানেট? এরা মহাজাগতিক স্বাধীনচেতা! কোনো নক্ষত্রের কক্ষপথে বাঁধা নেই। এরা ছায়াপথের অন্ধকার শূন্যতায় ভেসে চলে, নিজেদের পথে। কিন্তু এরা আসে কোথা থেকে? এদের জন্ম হয় তারকা-ব্যবস্থার অগ্নিকুণ্ডে, ঠিক আমাদের বৃহস্পতি বা মঙ্গল গ্রহের মতো। কিন্তু তারপর ঘটে এক মহাজাগতিক নাটক! অন্য গ্রহের সঙ্গে মাধ্যাকর্ষণের টানাটানি, বা তাদের মাতৃ-নক্ষত্রের বিস্ফোরক মৃত্যু—এদের ছুঁড়ে ফেলে মহাশূন্যের অতল গহ্বরে!
একটি জগৎ কল্পনা করুন, যেখানে কখনো সূর্য ওঠে না। রোগ প্ল্যানেটের পৃষ্ঠে চিরকালীন অন্ধকারের রাজত্ব। তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ২৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস—প্রায় পরম শূন্য! আকাশে কোনো তারা নেই, শুধু দূরবর্তী ছায়াপথের ঝিকিমিকি। কিন্তু এই হিমশীতল গ্রহগুলোর অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকতে পারে অবিশ্বাস্য রহস্য!
কিছু রোগ প্ল্যানেটের অভ্যন্তরে তেজস্ক্রিয় ক্ষয় বা জন্মের অবশিষ্ট শক্তি থেকে তীব্র তাপ থাকতে পারে। এই তাপ বরফ গলিয়ে তৈরি করতে পারে বিশাল ভূগর্ভস্থ মহাসাগর। আর এই মহাসাগরে? হয়তো লুকিয়ে আছে ক্ষুদ্র জীবাণু, বা এমনকি জটিল প্রাণের অস্তিত্ব! জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই অন্ধকার গ্রহগুলোতে এমন জীবন থাকতে পারে, যা আমাদের কল্পনার বাইরে। হয়তো কোনো রোগ প্ল্যানেটই হবে এলিয়েন প্রাণের প্রথম আবাসস্থল!
পৃথিবীর গভীর সমুদ্রে, যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, সেখানেও জীবন ফুটে ওঠে। তাহলে কেন রোগ প্ল্যানেটের অন্ধকার মহাসাগরে জীবন থাকবে না? এই গ্রহগুলো আমাদের প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়—জীবন কি শুধু আলোর ওপর নির্ভরশীল, নাকি অন্ধকারেও ফুল ফোটাতে পারে?
এত অন্ধকারে রোগ প্ল্যানেট খুঁজে পাওয়া যেন খড়ের গাদায় সুঁই খোঁজা! এরা কোনো আলো ছড়ায় না, কোনো নক্ষত্রের পাশে থাকে না। তাহলে বিজ্ঞানীরা এদের খুঁজে পান কীভাবে? উত্তর হলো মাইক্রোলেন্সিং! যখন একটি রোগ প্ল্যানেট দূরের তারার সামনে দিয়ে যায়, তার মাধ্যাকর্ষণ সেই তারার আলোকে বাঁকিয়ে দেয়। এই বাঁকানো আলো আমাদের টেলিস্কোপে ধরা পড়ে, আর তাতেই আমরা জানতে পারি—একটি ভবঘুরে গ্রহ এখানে আছে!
২০১৮ সালে NASA-র TESS টেলিস্কোপ আবিষ্কার করে SIMP J013656.5+093347, একটি রোগ প্ল্যানেট যার নিজস্ব শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে। আরেকটি ভবঘুরে গ্রহ, CFBDSIR 2149-0403, এর বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের সন্ধান মিলেছে! এই আবিষ্কারগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়—এই গ্রহগুলো শুধু নিঃসঙ্গ নয়, এরা রহস্যে ঠাসা!
এখনো আমরা কোনো রোগ প্ল্যানেটে মহাকাশযান পাঠাতে পারিনি। কিন্তু জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ-এর মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এদের রহস্য একে একে উন্মোচন করছে। এই টেলিস্কোপ আমাদের দেখাচ্ছে তাদের বায়ুমণ্ডল, পৃষ্ঠ, এমনকি ভূগর্ভস্থ মহাসাগরের সম্ভাবনা। কে জানে, হয়তো একদিন আমরা এমন এক রোগ প্ল্যানেটে খুঁজে পাবো এলিয়েন প্রাণের সাক্ষ্য!
ভবিষ্যতে আমরা হয়তো এই গ্রহগুলোর কাছে পৌঁছাবো। তাদের অন্ধকার মহাসাগরে ডুব দেবো। হয়তো এই নিঃসঙ্গ গ্রহগুলোই আমাদের বলে দেবে—মহাবিশ্বে আমরা একা নই!
রোগ প্ল্যানেট মহাবিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় বিস্ময়। এরা নিঃসঙ্গ, কিন্তু তাদের গল্প আমাদের কল্পনাকে ছুঁয়ে যায়। এরা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—মহাবিশ্ব এখনো আমাদের জন্য অজানা রহস্যে ভরা। হয়তো এই অন্ধকার গ্রহগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে জীবনের নতুন সংজ্ঞা, নতুন সম্ভাবনা।