জ্যোতির্বিজ্ঞান

মিল্কিওয়ের জম্বি তারার এক অদ্ভুত গল্প

মহাকাশ, আমাদের কল্পনার এক অজানা রাজ্য। তার মধ্যে লুকিয়ে আছে এমন সব আশ্চর্য যা আমাদের মুগ্ধ করে, আবার ভয়ও জাগায়। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে একটি অদ্ভুত এবং ভয়ঙ্কর বস্তু আবিষ্কার করেছেন—একটি জম্বি তারা, যা আসলে একটি ম্যাগনেটার। এই তারাটি ঘণ্টায় ১৭৭,০০০ কিলোমিটার বেগে ছুটছে, যা এটিকে সম্ভবত মিল্কিওয়ের সবচেয়ে দ্রুতগামী ম্যাগনেটার বানিয়েছে। কিন্তু এই জম্বি তারা আসলে কী? আর কেন এটি এত বিপজ্জনক?

ম্যাগনেটার হলো এক ধরনের নিউট্রন তারা, যা একটি বিশাল তারার সুপারনোভা বিস্ফোরণের পর জন্ম নেয়। এরা অবিশ্বাস্যভাবে ঘন—এক চা-চামচ ম্যাগনেটারের উপাদানের ওজন হতে পারে পৃথিবীর একটি পর্বতের সমান! কিন্তু যা ম্যাগনেটারকে সত্যিই ভয়ঙ্কর করে, তা হলো এর চৌম্বক ক্ষেত্র। এই চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীর চেয়ে কোটি কোটি গুণ শক্তিশালী। এত শক্তিশালী যে, এটি কাছাকাছি থাকলে আমাদের শরীরের পরমাণুগুলো পর্যন্ত ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে!

এই নির্দিষ্ট ম্যাগনেটারটি কেন এত দ্রুত ছুটছে? বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি হয়তো একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণের ধাক্কায় অথবা কোনো কাছাকাছি তারার সাথে মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়ার কারণে এই অবিশ্বাস্য গতি পেয়েছে। ঘণ্টায় ১৭৭,০০০ কিলোমিটার বেগ মানে, এটি এক সেকেন্ডে প্রায় ৪৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিচ্ছে! এই গতিতে এটি পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছে যেতে পারত মাত্র কয়েক মিনিটে।

ম্যাগনেটার শুধু দ্রুতগামী নয়, এরা মহাবিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক বস্তুগুলোর মধ্যে একটি। এরা শক্তিশালী গামা রশ্মি এবং এক্স-রে বিকিরণ নির্গত করতে পারে, যা কাছাকাছি কোনো গ্রহের জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তবে চিন্তার কিছু নেই—এই ম্যাগনেটারটি আমাদের থেকে অনেক দূরে। তবুও, এর গতিপথ এবং আচরণ নিয়ে বিজ্ঞানীরা গভীরভাবে গবেষণা করছেন, কারণ এটি আমাদের মহাবিশ্বের রহস্য বোঝার নতুন দ্বার খুলে দিতে পারে।

এই জম্বি তারা আমাদের পৃথিবীর জন্য এখনই কোনো হুমকি নয়। তবে এর আবিষ্কার আমাদের মহাকাশ সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে। ম্যাগনেটারের মতো বস্তুগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মহাবিশ্ব কতটা বিস্ময়কর এবং একইসঙ্গে ভয়ঙ্কর। এই ধরনের আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের মহাকাশের জটিল প্রক্রিয়া, যেমন তারার জন্ম, মৃত্যু এবং পুনর্জন্ম সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button