
প্রযুক্তির এই দুর্বার অগ্রযাত্রায় স্মার্টফোন এখন যেন মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সকাল ঘুম ভাঙা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত স্মার্টফোনের সঙ্গ ত্যাগ করা যেন আমাদের কাছে কল্পনাতীত হয়ে উঠেছে। তবে এই অভ্যাস যখন মাত্রাতিরিক্ত আসক্তিতে পরিণত হয়, তখন তা এক ভয়ংকর মানসিক সমস্যার রূপ নেয়—যার নাম ‘নোমোফোবিয়া’। শব্দটি এসেছে ইংরেজি “No Mobile Phone Phobia” থেকে, অর্থাৎ মোবাইল ফোন হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে মানসিক অস্থিরতা। এটি একধরনের উদ্বেগজনিত মানসিক রোগ, যা ধীরে ধীরে মানুষের আচরণ, আবেগ এবং জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নোমোফোবিয়া বর্তমানে একটি নীরব ঘাতক হিসেবে মানুষের মধ্যে বিস্তার লাভ করছে। এর প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—মোবাইল ফোন ছাড়া এক মুহূর্তও কাটাতে না পারা, ফোনের ব্যাটারি কমে গেলে কিংবা সিগন্যাল না থাকলে অতিরিক্ত চিন্তিত হয়ে পড়া, ফোন হারিয়ে গেলে বা বাসায় ফেলে এলেই তীব্র আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়া, ফোন চেক না করলে অস্থিরতা অনুভব করা, অহেতুক বারবার ফোন হাতে নেওয়া বা সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করা, এবং গভীর রাত পর্যন্ত ঘুম নািয়ে মোবাইলে ডুবে থাকা। এমনকি অনেক সময় দেখা যায়, কেউ একজন ফোনে কল বা মেসেজ দিচ্ছে কিনা তা বারবার চেক করতে করতে নিজের মধ্যে এক ধরনের মিথ্যা প্রত্যাশা ও হতাশা জন্ম নিচ্ছে। শিশু, কিশোর এমনকি প্রাপ্তবয়স্করাও এই ব্যাধির শিকার হচ্ছে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নোমোফোবিয়া মূলত মানসিক একধরনের অসুস্থতা, যার পেছনে দায়ী ব্যক্তিগত সম্পর্কের ঘাটতি, আত্মবিশ্বাসের অভাব, বাস্তব জীবনের চাপ এড়িয়ে ভার্চুয়াল জগতে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা এবং ডিজিটাল নির্ভরতা।
এই সমস্যার প্রতিকার সম্ভব যদি সময়মতো সচেতনতা তৈরি করা যায়। প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ের জন্য মোবাইল ব্যবহার কমিয়ে আনতে পারলে, বাস্তব জীবনে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করলে, সামাজিক ও শারীরিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হলে এবং প্রয়োজনে মনোচিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া হলে এই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নোমোফোবিয়া কোনো হঠাৎ সৃষ্টি হওয়া সমস্যা নয়, এটি ধীরে ধীরে মানুষকে গ্রাস করে।
তাই প্রয়োজন নিজেকে বোঝা, নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং ডিজিটাল ভারসাম্য রক্ষা করা। প্রযুক্তির সুবিধা নিতে গিয়ে যেন আমরা প্রযুক্তির দাসে পরিণত না হই, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখাটাই এখন সময়ের দাবি।
[এর উদ্দেশ্য হল শুধুমাত্র তথ্য জানানো। চিকিৎসা বা ডায়াগনসিস সংক্রান্ত পরামর্শের জন্য কোনও পেশাদার ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করুন।]