মুক্ত আলাপ

অন্যায়ের প্রতিবাদ একটি নৈতিক দায়িত্ব

(সারমিন জাহান মিতু, দীপ্তদেশ) অন্যায়ের প্রতিবাদ মানুষের নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সমাজে যখন অবিচার, শোষণ, বৈষম্য বা অনৈতিক কার্যকলাপ ঘটে, তখন চুপ থাকা মানে সেই অন্যায়কে মেনে নেওয়া। প্রকৃতির মতোই, যেখানে সবকিছু নিজস্ব ছন্দে সক্রিয় থাকে, মানুষের কণ্ঠও সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সক্রিয় হওয়া উচিত। প্রতিবাদ শুধু কথার মাধ্যমেই নয়, কর্মের মাধ্যমেও প্রকাশ পায়—এটি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার যা সমাজকে পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যায়।

অন্যায় বিভিন্ন রূপে আমাদের সামনে হাজির হয়। এটি হতে পারে সামাজিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক শোষণ, পরিবেশ ধ্বংস, বা মানবাধিকার লঙ্ঘন। প্রকৃতির প্রতি অবিচার—যেমন বন উজাড়, নদীর দূষণ, বা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি—আমাদের জীবনের ভিত্তিকে নষ্ট করে। একইভাবে, মানুষের প্রতি অবিচার—যেমন নারী নির্যাতন, শ্রমিক শোষণ, বা সংখ্যালঘু নিপীড়ন—সমাজের নৈতিক কাঠামোকে দুর্বল করে। এই সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা কেবল একটি পছন্দ নয়, বরং একটি দায়িত্ব।

প্রতিবাদ মানুষের মনে জাগরণ সৃষ্টি করে। ইতিহাস সাক্ষী, সত্যাগ্রহ থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন, নাগরিক অধিকার আন্দোলন থেকে পরিবেশ সুরক্ষার আন্দোলন—প্রতিবাদই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। প্রতিবাদ শুধু অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া নয়, এটি নিজের এবং সমাজের বিবেককে জাগ্রত করার একটি মাধ্যম। যেমন প্রকৃতি তার নিয়মে অটল, তেমনি প্রতিবাদের কণ্ঠও অটল থাকা উচিত, যতক্ষণ না পরিবর্তন আসে।

প্রতিবাদের রূপ ভিন্ন হতে পারে। এটি হতে পারে রাস্তায় মিছিল, লেখনীর মাধ্যমে সচেতনতা, সামাজিক মাধ্যমে প্রচার, বা নীরব প্রতিরোধ। প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে প্রতিবাদের একটি শক্তিশালী রূপ হতে পারে পরিবেশ রক্ষার জন্য গাছ লাগানো, প্লাস্টিক বর্জন, বা টেকসই জীবনযাপন। একইভাবে, সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর তুলে, শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা ছড়িয়ে, বা দুর্বলদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জারি রাখা যায়।

প্রতিবাদের পথ সবসময় সহজ নয়। এটি প্রায়ই ঝুঁকি, সমালোচনা বা বাধার সম্মুখীন হয়। তবুও, প্রকৃতির মতোই, যেখানে একটি গাছ কাটা পড়লে আরেকটি অঙ্কুরিত হয়, প্রতিবাদও থেমে থাকে না। এক্ষেত্রে সংঘবদ্ধতা, সচেতনতা, এবং অধ্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা ও সংলাপের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, এবং ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা প্রতিবাদকে আরও শক্তিশালী করে।

অন্যায়ের প্রতিবাদ শুধু একটি কাজ নয়, এটি একটি জীবনধারা। প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে, তার শক্তি ও ছন্দ থেকে শিক্ষা নিয়ে, আমরা প্রতিবাদের উচ্চারণ জারি রাখতে পারি। প্রতিটি কণ্ঠ, প্রতিটি পদক্ষেপ, এমনকি নীরব প্রতিরোধও পরিবর্তনের বীজ বপন করে। তাই আসুন, চুপ না থেকে, প্রকৃতির মতো সক্রিয় থাকি—অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button