
মহাকাশ চিরকালই আমাদের কাছে এক অপার রহস্যের ভান্ডার। প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন আবিষ্কার করে চলেছেন যা আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধারণাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। সম্প্রতি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তেমনই এক অদ্ভুত ও অজানা বস্তুর সন্ধান পেয়েছেন যা আমাদের চেনা জগতের বাইরে।
অস্ট্রেলিয়ার মার্চিসন ওয়াইডফিল্ড অ্যারে (MWA) রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ‘ASKAP J1832-0911’ নামে এই বস্তুটি আবিষ্কার করেছেন। এর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এটি নিয়মিত বিরতিতে অস্বাভাবিক রেডিও সংকেত পাঠাচ্ছে। প্রতি ৪৪ মিনিটে একবার, টানা দুই মিনিট ধরে এটি সংকেত নির্গত করে চলেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই বস্তুটি এমন কিছু যা তারা আগে কখনো দেখেননি। এটি পরিচিত কোনো জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুর শ্রেণির (যেমন, নিউট্রন তারা, সাদা বামন) সাথে পুরোপুরি খাপ খাচ্ছে না।
সাধারণত, পালসার নামক এক ধরনের নিউট্রন তারা খুব দ্রুত ঘোরে এবং প্রতি কয়েক সেকেন্ড বা তারও কম সময়ে শক্তিশালী রেডিও সংকেত পাঠায়। কিন্তু ‘ASKAP J1832-0911’ এর সংকেতের বিরতি অনেক, অনেক দীর্ঘ – ৪৪ মিনিট! এটি পালসারের তুলনায় অনেক ধীর এবং সাদা বামন তারার মতো বস্তুর চেয়েও ভিন্ন আচরণ করছে। এখানেই এই বস্তুটির রহস্য।
এই গবেষণার নেতৃত্বে থাকা বিজ্ঞানী ড. নাতাশা হার্লি-ওয়াকার বলেছেন, “এই বস্তুটি আমাদের জানা জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুগুলোর কোনো শ্রেণির সাথে মানানসই নয়। এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বস্তু বা ঘটনা হতে পারে।”
আরও অবাক করার বিষয় হলো, বিজ্ঞানীরা ১৯৮৮ সালের পুরনো পর্যবেক্ষণ ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, বস্তুটি সেই সময়ও একই ধরনের সংকেত পাঠাচ্ছিল। এর মানে হলো, গত ৩৫ বছর ধরে এটি অত্যন্ত স্থিতিশীলভাবে এই অদ্ভুত সংকেত নির্গত করে চলেছে। এর স্থায়িত্বও এটিকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এই বস্তুটির প্রকৃতি বোঝার জন্য বিভিন্ন সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন। একটি ধারণা হলো, এটি হয়তো একটি অত্যন্ত ধীরগতির নিউট্রন তারকা। আরেকটি সম্ভাবনা হলো, এটি একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রযুক্ত সাদা বামন তারা যা একটি সঙ্গী তারার সাথে যুগ্মভাবে ঘুরছে। তবে, কোনো ব্যাখ্যাই এখনো পর্যন্ত এই বস্তুর সব বৈশিষ্ট্যকে পুরোপুরিভাবে ব্যাখ্যা করতে পারছে না।
‘ASKAP J1832-0911’ মহাকাশের এক নতুন ধাঁধা যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কৌতূহলকে তীব্র করেছে। এটি হয়তো মহাবিশ্বের এমন কোনো অজানা ঘটনা বা বস্তুর প্রথম উদাহরণ যা সম্পর্কে আমরা আগে কিছুই জানতাম না। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে আরও গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই রহস্যের কিনারা হবে এবং মহাকাশের এই অদ্ভুত সংকেতের উৎস উন্মোচিত হবে, যা হয়তো আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
এই অজানা বস্তুটি প্রমাণ করে যে মহাকাশ এখনো কত রহস্যে ভরা এবং কত নতুন কিছু আমাদের জানার অপেক্ষায় রয়েছে!