
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ইসরায়েলের একটি দাবি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বলা হয়েছে, মাত্র সাত ঘন্টার প্রস্তুতির মাধ্যমে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে সক্ষম। এর জবাবে ইরান কড়া ভাষায় জানিয়েছে, তারা যেকোনো আক্রমণের বিরুদ্ধে দ্রুত এবং শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেবে। এই পারস্পরিক হুমকি ও পাল্টা হুমকি মধ্যপ্রাচ্যের ইতিমধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই উত্তেজনা কেবল দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরিতা কোনো নতুন বিষয় নয়। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, ইসরায়েলের সামর705িক শ্রেষ্ঠত্ব এবং আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা এই দ্বন্দ্বের মূল কারণ। ইসরায়েলের দাবি যে তারা সাত ঘন্টার মধ্যে হামলা চালাতে পারে, তা একদিকে তাদের সামরিক সক্ষমতার প্রকাশ, অন্যদিকে ইরানের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টির কৌশল। ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়াও একইভাবে তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও দৃঢ় অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। তবে এই বাকযুদ্ধ যদি প্রকৃত সংঘাতে রূপ নেয়, তবে তার পরিণতি হবে বিধ্বংসী।
মধ্যপ্রাচ্যে ইতিমধ্যে চলমান সংঘাত, যেমন সিরিয়া ও ইয়েমেনের যুদ্ধ, এই অঞ্চলের জনগণের জন্য দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ নতুন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে, যা কেবল এই দুই দেশ নয়, বরং পুরো অঞ্চলের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। তেলের দাম বৃদ্ধি, শরণার্থী সংকট এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাধার মতো বিষয়গুলো বিশ্ব অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
এই উত্তেজনা নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো শক্তিশালী সংস্থাগুলোর উচিত কূটনৈতিক পথে এই দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টা করা। ইরানের পারমাণবিক চুক্তি (JCPOA) পুনরুজ্জীবন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে সংলাপ এই পরিস্থিতি শান্ত করতে পারে। একই সঙ্গে, উভয় দেশের নেতৃত্বকে সংযত আচরণ এবং দায়িত্বশীল বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে উত্তেজনা কমানোর জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয় যে যুদ্ধ কখনো সমাধান নয়। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত যদি সামরিক রূপ নেয়, তবে তা কেবল এই অঞ্চলের জন্য নয়, বরং বিশ্বের জন্য একটি বিপর্যয় হবে। এই মুহূর্তে প্রয়োজন শান্তি ও সংলাপের পথ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং উভয় দেশের নেতৃত্বের উচিত এই সংকটকে কূটনীতির মাধ্যমে সমাধান করা, যাতে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।
তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।