
চাঁদ সম্পর্কে বেশ কিছু রহস্য এবং প্রশ্ন বিজ্ঞানীদের মনে কৌতূহল জাগিয়েছে, যার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ “পোপন রহস্য” নিম্নরূপ:
চাঁদের উৎপত্তি: চাঁদ কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়ে এখনও পূর্ণাঙ্গ ঐক্যমত নেই। সবচেয়ে প্রচলিত তত্ত্ব হলো “জায়ান্ট ইমপ্যাক্ট হাইপোথিসিস”, যেখানে বলা হয়, প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর সাথে মঙ্গল গ্রহের আকারের একটি বস্তু (থিয়া নামে পরিচিত) সংঘর্ষের ফলে চাঁদের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই তত্ত্বের কিছু দিক, যেমন চাঁদের রাসায়নিক গঠন, এখনও পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায়নি।
চাঁদের দূরবর্তী পাশ (Dark Side): চাঁদের যে অংশ পৃথিবী থেকে দেখা যায় না, তাকে “ফার সাইড” বা দূরবর্তী পাশ বলা হয়। এই অংশের ভূ-প্রকৃতি পৃথিবীমুখী অংশের তুলনায় ভিন্ন। এখানে কম “মারিয়া” (বড় সমতল অঞ্চল) এবং বেশি গর্ত রয়েছে। কেন এই পার্থক্য, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
চাঁদের অভ্যন্তরীণ গঠন: চাঁদের অভ্যন্তরে কী আছে, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় ধারণা করা হয়, চাঁদের কেন্দ্রে একটি তরল ধাতব কোর থাকতে পারে, কিন্তু এর আকার ও প্রকৃতি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
চাঁদের অস্বাভাবিক চৌম্বক ক্ষেত্র: পৃথিবীর মতো চাঁদের কোনো শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র নেই, তবে অ্যাপোলো মিশন থেকে পাওয়া পাথরে চৌম্বক বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে অতীতে চাঁদের একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র ছিল। কিন্তু কীভাবে এবং কেন এটি হারিয়ে গেল, তা একটি রহস্য।
চন্দ্র মাটিতে অদ্ভুত পদার্থ: চাঁদের মাটিতে (রেগোলিথ) কিছু অস্বাভাবিক উপাদান পাওয়া গেছে, যেমন হিলিয়াম-৩, যা পৃথিবীতে খুবই দুষ্প্রাপ্য। এছাড়া, চীনের চ্যাং’ই-৫ মিশনে চাঁদের মাটিতে অদ্ভুত কাচের মতো পদার্থ পাওয়া গেছে, যার উৎপত্তি এখনও অস্পষ্ট।
চন্দ্র ভূমিকম্প (Moonquakes): চাঁদে ভূমিকম্পের মতো কম্পন (মুনকুয়েক) রেকর্ড করা হয়েছে, যা পৃথিবীর ভূমিকম্পের চেয়ে ভিন্ন। এর মধ্যে কিছু গভীর চন্দ্র ভূমিকম্প, যা চাঁদের অভ্যন্তরীণ তাপ বা গঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। কিন্তু এদের সঠিক কারণ এখনও বোঝা যায়নি।
চাঁদের জলের রহস্য: সাম্প্রতিক গবেষণায় চাঁদের পৃষ্ঠে এবং মাটির নিচে জলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, বিশেষ করে মেরু অঞ্চলে। কিন্তু এই জল কোথা থেকে এলো এবং কীভাবে সংরক্ষিত আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
চাঁদের অদ্ভুত আলোক প্রকাশ (Transient Lunar Phenomena): শতাব্দী ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা চাঁদের পৃষ্ঠে ক্ষণস্থায়ী আলো, কুয়াশা বা রঙের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। এর কারণ হিসেবে গ্যাস নির্গমন, ভূমিকম্প বা অন্য কিছু ধারণা করা হয়, কিন্তু সঠিক ব্যাখ্যা এখনও অজানা।
এই রহস্যগুলো চাঁদকে বিজ্ঞানীদের কাছে একটি আকর্ষণীয় গবেষণার বিষয় করে তুলেছে। চীনের চ্যাং’ই মিশন, নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রাম এবং অন্যান্য মহাকাশ অভিযানের মাধ্যমে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা চলছে।
-আল মামুন রিটন
ছবি ক্রেডিট: ক্যানভা, দীপ্তদেশ