
বিশ্বের নানা প্রান্তে রাতের আকাশে হঠাৎ করে নজর কাড়ল এক অপূর্ব দৃশ্য—একটি গোলাপি আভায় মোড়া পূর্ণ চাঁদ, যাকে বলা হচ্ছে “স্ট্রবেরি মুন”। নামটা যতটা কাব্যিক, এর পেছনের কারণটিও তেমনই ইতিহাস ও প্রকৃতির মিশেলে গড়া। আকাশপ্রেমী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত—প্রায় সবাই বিস্মিত এই চাঁদের সৌন্দর্যে ও রহস্যে। কিন্তু আসলেই কি চাঁদ গোলাপি হয়ে যায়? নাকি এই নামের পেছনে রয়েছে কোনো সাংস্কৃতিক বা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা?
স্ট্রবেরি মুন নামটি এসেছে মূলত উত্তর আমেরিকার স্থানীয় আদিবাসীদের বর্ষপঞ্জি থেকে। জুন মাসে যখন স্ট্রবেরি বা স্ট্রবেরি জাতীয় ফল পাকার সময় হয়, তখনকার পূর্ণিমার চাঁদকে তারা এই নামে ডাকত। এর পেছনে ছিল মৌসুমি কৃষিকাজ ও ফসল সংগ্রহের নির্দিষ্ট সময়চিহ্ন। পরে এই ঐতিহ্য ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমা জগতে এবং “স্ট্রবেরি মুন” নামে পরিচিত হয় জুন মাসের পূর্ণচন্দ্র। যদিও বাস্তবে এই চাঁদ গোলাপি বা লালচে হয় না, তবুও কখনো কখনো আকাশে ধুলা-কণিকা বা বায়ুমণ্ডলের আর্দ্রতার কারণে চাঁদের আভা লালচে বা কমলা দেখাতে পারে, যা মানুষের চোখে এক রোমান্টিক বিভ্রম তৈরি করে।
স্ট্রবেরি মুন সাধারণত গ্রীষ্মের সূচনার ইঙ্গিত দেয়। অনেক সময় এটি বছরের সবচেয়ে কম উচ্চতায় ওঠা পূর্ণচন্দ্রও হয়ে থাকে, যার ফলে এটি অপেক্ষাকৃত বড় ও উজ্জ্বল মনে হয়। এটিকে “মাইক্রো মুন” বলারও একটি কারণ রয়েছে, কারণ এই সময় চাঁদ পৃথিবী থেকে অপেক্ষাকৃত একটু বেশি দূরে অবস্থান করে, ফলে আকারে কিছুটা ছোট দেখায়। তবে আলোকছায়ার খেলা এবং নিম্ন দিগন্তে থাকার কারণে এটি অনেক সময় “সুপার মুন”-এর মতো বিশাল ও মোহময়ও দেখায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মিডিয়ার প্রসারে স্ট্রবেরি মুন এখন আর শুধু আকাশে তাকিয়ে দেখার বিষয় নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে একটি বৈশ্বিক রোমাঞ্চের উপলক্ষ। অনেকেই বিশ্বাস করে এই বিশেষ চাঁদের উপস্থিতিতে আবেগপ্রবণতা বাড়ে, প্রেমিকদের সম্পর্ক গভীর হয়, এমনকি কোনো কোনো জ্যোতিষশাস্ত্রের অনুকরণে এটিকে সৌভাগ্যের প্রতীকও মনে করা হয়। যদিও এসবের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, তথাপি স্ট্রবেরি মুন আমাদের কল্পনাকে আলোড়িত করে, মনকে উজ্জ্বল করে তোলে।
আলোচিত এই চাঁদ আসলে আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির প্রতিটি পরিবর্তন, এমনকি একটি পূর্ণিমা রাতও কতটা প্রভাব ফেলতে পারে আমাদের সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও সৌন্দর্যবোধের ওপর। স্ট্রবেরি মুন তাই শুধু একটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক ও মানসিক অভিজ্ঞতা, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বিস্ময় ছড়ায় এক গোলাপি নামের চাঁদের আলোয়।