বৈচিত্র্য আলাপ

মানুষ কি সত্যিই পৃথিবীর প্রাণী? বিজ্ঞানী এলিস সিলভারের চাঞ্চল্যকর তত্ত্ব

বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা যেখানে প্রাণের খোঁজে তাকিয়ে আছেন মহাকাশের দিকে, সেখানে এক বিজ্ঞানীর বক্তব্য যেন উল্টো দিকে আলো ফেলে দিয়েছে। নাসার কেপলার টেলিস্কোপ যখন একের পর এক সম্ভাব্য বাসযোগ্য গ্রহ খুঁজে বের করছে, আর স্টিফেন হকিং কিংবা নাসার শীর্ষ বিজ্ঞানীরা যখন বলছেন— “এলিয়েন আছে, এবং আমরা তাদের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি”, তখন আমেরিকার একজন প্রখ্যাত ইকোলজিস্ট ডঃ এলিস সিলভার এক চাঞ্চল্যকর দাবি তুলে ধরেছেন— মানুষ আদতে এই পৃথিবীর জীবই নয়। বরং আমরা সবাই আসলে ভিনগ্রহের প্রাণী!

ডঃ সিলভার তাঁর বই “Humans are not from Earth: A Scientific Evaluation of the Evidence”–এ যুক্তি দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছেন, মানুষের শারীরিক গঠন, রোগপ্রবণতা, এবং পৃথিবীর সঙ্গে তার সম্পর্ক আসলে প্রমাণ করে, এই গ্রহ আমাদের জন্য স্বাভাবিক নিবাস নয়। তাঁর মতে, বহু লক্ষ বছর আগে কোনো উন্নত গ্রহের এলিয়েনরা আমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিয়েছিল, হয়তো বন্দী করে বা বাঁচিয়ে রাখার জন্য। তিনি দেখিয়েছেন— মানুষের শরীরে সূর্যালোকের সহ্যক্ষমতা অত্যন্ত কম, বৃষ্টিতে দীর্ঘক্ষণ ভিজে থাকা সম্ভব নয়, ব্যাক পেইন ও চোখের সমস্যা অতিমাত্রায়, এমনকি ঘুমের অভ্যন্তরীণ সময়চক্র পৃথিবীর ২৪ ঘণ্টার দিনের সঙ্গে পুরোপুরি খাপ খায় না।

তাঁর আরও যুক্তি— পৃথিবীর কোনো প্রাণীই তাদের খাবার রান্না বা প্রক্রিয়াজাত করে খায় না, শুধু মানুষ ছাড়া। মানুষ কাঁচা খাবার খেতে অপছন্দ করে, অনেক সময় তা হজমও করতে পারে না। তাহলে মানুষ কি প্রকৃতির অংশ? নাকি তাকে কোনো প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত সভ্যতা তৈরি করেছে একটি আলাদা পরিবেশের জন্য? মানুষের দেহে থাকা অতিরিক্ত ২২৩টি জিন, যার উৎস পরিষ্কার নয়, সেটাও এই ধারণাকে উসকে দেয়।

এমন চাঞ্চল্যকর তত্ত্ব অবশ্য বিজ্ঞানসমাজে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে। নৃবিজ্ঞান, জেনেটিক্স ও জীবাশ্মবিদ্যা বলছে— মানুষ হোমো ইরেকটাস থেকে বিবর্তিত হয়ে আজকের রূপে এসেছে, যার সূচনা আফ্রিকায় প্রায় ২০ লক্ষ বছর আগে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ, জলবায়ু, এবং প্রাকৃতিক বিবর্তন মানুষের গঠন এবং আচরণে ছাপ ফেলেছে। ব্যাক পেইন, সূর্যরশ্মি সহ্য না করার ক্ষমতা ইত্যাদি আসলে বিবর্তনের সীমাবদ্ধতা, এলিয়েন হয়ে আসার প্রমাণ নয়।

বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ, যা এই তত্ত্বে অনুপস্থিত। তারপরও, এই ধরণের চিন্তা অনেক পাঠকের কল্পনাশক্তিকে আলোড়িত করে। আমরা আদৌ এই গ্রহের প্রাণী তো? যদি আমরা সত্যিই ভিনগ্রহের প্রাণী হই, তাহলে নাসা যাদের খুঁজছে তারা আসলে কারা? আমাদের পূর্বপুরুষ? না কি অন্য কোনো উন্নত বুদ্ধিমত্তার প্রাণী?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হয়তো সময় দেবে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত, ডঃ সিলভারের মতবাদটি কল্পবিজ্ঞান আর বিকল্প ভাবনার মধ্যেই ঘুরপাক খাবে— যেমনটা বহু যুগ আগে পৃথিবী সূর্যকে ঘিরে ঘোরে, এই সত্যটিও প্রথমে হয়েছিল!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button