
মস্তিষ্ক বিশ্লেষণে সম্প্রতি এক চমকপ্রদ আবিষ্কারের কথা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানুষের মতো হাতির মস্তিষ্কেও রয়েছে ‘ফিউসিফর্ম নিউরন’ নামের এক বিশেষ ধরণের কোষ, যা মূলত সহানুভূতি, আত্ম-সচেতনতা এবং জটিল সামাজিক আচরণের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত।
সাধারণভাবে ধারণা ছিল, এই নিউরন কেবলমাত্র মানুষের, কিছু উঁচু স্তরের প্রাইমেট এবং ডলফিনের মতো উচ্চ বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণীর মস্তিষ্কেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু হাতির মধ্যে এই নিউরনের উপস্থিতি একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
গবেষণা অনুযায়ী, এই কোষগুলোর কাজ মূলত দ্রুত আবেগগত সংকেত প্রক্রিয়াজাত করা এবং সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করা। হাতিরা যে স্মৃতি শক্তিতে প্রখর, তা আগে থেকেই জানা। কিন্তু তাদের আচরণগত বিশ্লেষণে বারবার উঠে এসেছে এমন কিছু প্রবণতা, যা মানুষের আবেগ ও সামাজিকতার সঙ্গে মিলে যায়। মৃত আত্মীয়ের শরীরকে ঘিরে শোক প্রকাশ, দীর্ঘদিন পর কোনো সঙ্গীকে চিনে ফেলা, বিপদে দলীয় সহযোগিতা কিংবা আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব চিনে নেওয়ার মতো আচরণ এসবেরই উদাহরণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিউসিফর্ম নিউরনের উপস্থিতি কেবল মস্তিষ্কের গঠনগত বা নিউরোঅ্যানাটমির বিষয় নয়, বরং এটি একটি জৈবিক ভিত্তি যা প্রাণীদের মাঝে মানবিক অনুভূতি ও জটিল চিন্তাশক্তির বিকাশের ব্যাখ্যা দেয়। হাতির এই স্নায়ুকোষ তাদের অনুভূতির গভীরতা এবং সামাজিক সংবেদনশীলতা সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে বিজ্ঞানীদের।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, মানুষের সাথে এই কোষের মিল কতটা এবং এ থেকে ভবিষ্যতে প্রাণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে কীভাবে কাজ করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নিউরনের গবেষণা আমাদের কেবল প্রাণীদের বুঝতে সাহায্য করবে না, বরং মানুষের মস্তিষ্ক এবং আচরণের জটিলতা সম্পর্কেও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, হাতির মস্তিষ্কে ফিউসিফর্ম নিউরনের এই আবিষ্কার শুধুমাত্র একটি বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ নয়—এটি মানবিক অনুভূতির সীমানা ছাড়িয়ে প্রাণীকুলের অজানা জগতের দরজা খুলে দেওয়া এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।