
(বিশেষ প্রতিবেদন | অল মামুন রিটন) বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের তৈরি এক অদ্ভুত প্রযুক্তি—‘মলিকিউলার জ্যাকহ্যামার’। প্রতি সেকেন্ডে এক ট্রিলিয়ন বার কাঁপতে সক্ষম এই আণবিক যন্ত্র যখন নিয়ার-ইনফ্রারেড (NIR) আলো দ্বারা সক্রিয় হয়, তখন তা ক্যান্সার কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ভেতর থেকে সেগুলোকে চূর্ণবিচূর্ণ করে ধ্বংস করে দেয়। গবেষণা বলছে, এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে পরীক্ষাগারে মেলানোমা নামক ত্বকের ক্যান্সারের ৯৯ শতাংশ কোষ ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে—সুস্থ কোষের কোনো ক্ষতি না করেই।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল বায়োমেডিক্যাল বিজ্ঞানী। তাঁরা জানান, এ যন্ত্রটি মূলত এমন একটি রঞ্জক পদার্থের (ডাই) মাধ্যমে ক্যান্সার কোষে প্রবেশ করে, যা FDA কর্তৃক ইতিমধ্যেই চিত্রায়ন বা ইমেজিংয়ের জন্য অনুমোদিত। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই ডাই স্বাভাবিকভাবেই ক্যান্সার কোষের প্রতি আকৃষ্ট হয়, ফলে চিকিৎসাটি নিখুঁতভাবে লক্ষ্যভিত্তিক এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন হয়।
পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রযুক্তি ইঁদুরের শরীরে প্রয়োগ করা হলে দেখা যায়, মাত্র একটি ট্রিটমেন্টেই তাদের শরীরের অর্ধেকেরও বেশি টিউমার সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে গেছে। গবেষকেরা এটিকে একটি ‘মেকানিক্যাল মেথড’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন—যেখানে কোনো রাসায়নিক বিষ প্রয়োগের বদলে কোষের গঠনই কম্পনের মাধ্যমে ভেঙে ফেলা হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই আবিষ্কার ক্যান্সার চিকিৎসায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। যেখানে কেমোথেরাপির মতো বিষাক্ত প্রক্রিয়ার পরিবর্তে, ভবিষ্যতের চিকিৎসা হতে চলেছে আরও নিখুঁত, লক্ষ্যনির্ভর এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই উদ্ভাবনকে ঘিরে ইতিমধ্যেই ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে যেহেতু প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত উপাদান FDA অনুমোদিত এবং কোষ নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যান্সার কোষকেই টার্গেট করে, তাই বিজ্ঞানীরা বলছেন—এই প্রযুক্তি বাস্তব চিকিৎসায় প্রয়োগের দিক থেকে আর খুব বেশি দূরে নেই।
বিশ্বজুড়ে ক্যান্সার চিকিৎসার ভীত পুনর্গঠনে ‘মলিকিউলার জ্যাকহ্যামার’ হতে পারে এক অনন্য সম্ভাবনার নাম। হয়তো আর বেশি দিন নয়—বিষ নয়, বরং নিখুঁত কম্পনের মাধ্যমেই ধ্বংস হবে প্রাণঘাতী কোষ।
– সূত্র। SCOC