
২০২৫ সালের দিকে সূর্য তার সর্বোচ্চ শক্তির পর্যায়ে পৌঁছাতে চলেছে। বিজ্ঞানীরা একে বলছেন—Solar Maximum। প্রতি ১১ বছর পরপর সূর্য একটি সম্পূর্ণ চক্রে প্রবেশ করে, যার শুরু হয় Solar Minimum দিয়ে, যেখানে সূর্যের তৎপরতা থাকে সবচেয়ে কম, তারপর ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে তা পৌঁছায় Solar Maximum-এ। আর ঠিক এই সময়েই সূর্যের চুম্বকীয় কার্যকলাপ হয় সবচেয়ে বেশি, সৌরফুটকি, সৌর জ্বলন আর ভয়ংকর সৌরঝড় হয়ে আছড়ে পড়ে মহাকাশে।
এই চক্রকে বলা হয় Solar Cycle। বর্তমানে আমরা আছি সৌরচক্র ২৫-এ, যা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এই চক্রটি ২০২৫ সালের মধ্যে তার চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছাবে। অর্থাৎ, সামনে আসছে সূর্যের সর্বোচ্চ উগ্র রূপ—Solar Maximum।
এই সময় সূর্যের পৃষ্ঠে অস্থিরতা তৈরি হয়। দেখা দেয় বিশাল আকারের সৌরফুটকি ও সৌর জ্বলন, যা মহাকাশে ছড়িয়ে দেয় বিপুল পরিমাণ শক্তিশালী কণিকা ও বিকিরণ। এর ফলে সৃষ্টি হয় সৌরঝড়—যা পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র ও মহাকাশ প্রযুক্তির জন্য হতে পারে হুমকিস্বরূপ।
বিশেষ করে এই সময় স্যাটেলাইট, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, স্পেস মিশন, এবং জিপিএস ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সবকিছুতেই বাড়ে ঝুঁকি। সৌরঝড়ের তীব্রতায় সিগনাল বিচ্ছিন্ন হতে পারে, নেটওয়ার্ক বিভ্রাট হতে পারে, এমনকি বিদ্যুৎ গ্রিড পর্যন্ত ব্যাহত হতে পারে। অতীতে এমন ঘটনাও ঘটেছে—যেমন ১৯৮৯ সালে একটি তীব্র সৌরঝড়ে কানাডার কুইবেকে পুরো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অচল হয়ে গিয়েছিল।
তবে শুধুই ভয়ের বিষয় নয়। সৌরঝড়ের সময় পৃথিবীর আকাশে দেখা যায় অরোরা—রঙিন আলোয় ঝলমলে এক অদ্ভুত সৌন্দর্য। সাধারণত মেরু অঞ্চলে দেখা গেলেও তীব্র সৌরঝড়ের সময় তা নেমে আসে আরও দক্ষিণে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের মাঝামাঝি অঞ্চলেও দেখা যায় এই অলৌকিক দৃশ্য।
সৌরচক্র ২৫ কে নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন খুবই সক্রিয়ভাবে গবেষণা করছেন। বিভিন্ন মহাকাশ সংস্থা—NASA, NOAA, ESA সহ অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সূর্যের কার্যকলাপ নজরে রাখছে প্রতিমুহূর্তে। কারণ, আমাদের আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে সূর্যের এই আচরণ সরাসরি প্রভাব ফেলে—বিশেষ করে কমিউনিকেশন, নেভিগেশন, ফ্লাইট সিস্টেম, এমনকি ব্যাংকিং সিস্টেমেও।
তাই এখনই সময় সতর্ক হওয়ার। ২০২৫ সাল নাগাদ সৌর সর্বোচ্চ পর্যায় শুরু হলে আমাদের পৃথিবীও কিছুটা চাপে থাকবে। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির কল্যাণে আমরা এখন আগেভাগেই অনেক কিছু আন্দাজ করতে পারি এবং প্রস্তুতি নিতে পারি।
সূর্য আমাদের জীবনের মূল উৎস, কিন্তু তার তাণ্ডবও ভয়ংকর হতে পারে। এই Solar Maximum আমাদের সামনে যেমন বিস্ময়কর দৃশ্য আনবে, তেমনি আনতে পারে প্রযুক্তিগত ঝুঁকিও। তাই বিজ্ঞানীদের চোখ এখন সূর্যের দিকে—কারণ জানাই শেষ রক্ষার প্রথম ধাপ।