
স্টোনহেঞ্জ ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ার অঞ্চলে অবস্থিত এক প্রাগৈতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ, যা এখনও আধুনিক সভ্যতার কাছে এক বিস্ময় হয়ে রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব আনুমানিক ৩০০০ থেকে ২৫০০ সালের মধ্যে এটি নির্মিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এটি মূলত নিউলিথিক যুগ এবং ব্রোঞ্জ যুগের মানুষের দ্বারা গঠিত একটি স্থাপনা, তবে একে কোনো নির্দিষ্ট সভ্যতার আওতায় ফেলা যায় না, কারণ তখনকার মানুষের লিখিত কোনো ইতিহাস নেই। এই নির্মাতারা পরিচিত ‘স্টোনহেঞ্জ নির্মাতা’ নামে—আদিম ব্রিটিশ সমাজেরই অংশ।
স্টোনহেঞ্জের কেন্দ্রে রয়েছে বৃহৎ আকারের দাঁড় করানো পাথর, যেগুলোর কিছু একে অপরের উপর স্থাপন করা। এই পাথরগুলো কোথা থেকে কীভাবে আনা হয়েছিল এবং কীভাবে সেগুলো এত নিখুঁতভাবে স্থাপন করা হয়েছিল—তা আজও এক রহস্য। এই নির্মাণকর্মে ব্যবহৃত কিছু পাথর প্রায় ২০০ মাইল দূরের ওয়েলস অঞ্চল থেকে আনা হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়, যা সেই সময়ের প্রযুক্তি বিবেচনায় অবিশ্বাস্য।
স্টোনহেঞ্জের মূল উদ্দেশ্য নিয়েও গবেষকদের মধ্যে নানা মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন এটি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের স্থান ছিল, আবার কেউ বলেন এটি ছিল একটি জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। অনেকে একে পূর্বপুরুষদের স্মরণে নির্মিত একটি স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবেও ভাবেন। গ্রীষ্মকালীন বিষুব (summer solstice) এবং শীতকালীন বিষুবের (winter solstice) সময় সূর্যের আলো ঠিক নির্দিষ্টভাবে এই পাথরগুলোর মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে, যা এর জ্যোতির্বিদ্যার সাথে সংযোগের ইঙ্গিত দেয়।
আজও স্টোনহেঞ্জ ঘিরে মানুষের কৌতূহল কমেনি। এটি শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্যেই নয়, বরং সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এক অসাধারণ নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়। এই স্থাপনাটি নিঃসন্দেহে আমাদের অতীতের মানুষের জ্ঞান, অধ্যবসায় ও কল্পনাশক্তির এক নিঃশব্দ সাক্ষী।