
পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঘটে চলা গভীর প্রক্রিয়া হয়তো আমাদের গ্রহের পৃষ্ঠে প্রাণের বাসযোগ্যতাকেই প্রভাবিত করছে—এমনই এক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিলেন নাসার বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে তারা দেখিয়েছেন, গত ৫৪০ মিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তির ওঠানামা এবং বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেনের পরিমাণের পরিবর্তনের মধ্যে বিস্ময়করভাবে সাদৃশ্য রয়েছে।
পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয় গ্রহের গলিত অভ্যন্তরের প্রবাহিত পদার্থ দ্বারা, যা এক বিশাল ইলেক্ট্রোম্যাগনেটের মতো কাজ করে। তবে এই প্রবাহ নিরবিচারে স্থির নয়—এতে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন ঘটে। অনেক বিজ্ঞানীর মতে, এই চৌম্বক ক্ষেত্র সূর্য থেকে আসা শক্তিশালী কণার আক্রমণ থেকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে রক্ষা করে। যদিও এই ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।
নতুন এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল একধরনের প্রমাণ খুঁজে বের করা—পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র এবং বায়ুমণ্ডলের মধ্যে কি কোনো পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে? গবেষক দল প্রথমে চৌম্বক ক্ষেত্র ও অক্সিজেনের ইতিহাস বিশ্লেষণযোগ্য প্রমাণ খুঁজে বের করেন।
এই ইতিহাস লুকিয়ে থাকে প্রাচীন খনিজ ও শিলায়। যখন গলিত ম্যাগমা টেকটোনিক প্লেটের ফাঁকে উঠে আসে এবং ঠান্ডা হয়, তখন সেই গরম খনিজগুলো আশেপাশের চৌম্বক ক্ষেত্রকে ধারণ করে রাখে। যতক্ষণ না তারা পুনরায় গরম হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা সেই চৌম্বক ক্ষেত্রের রেকর্ড ধরে রাখে। অপরদিকে, প্রাচীন খনিজ ও শিলার রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করে বোঝা যায় সেই সময়ে বায়ুমণ্ডলে কত পরিমাণ অক্সিজেন ছিল।
নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের ভূভৌতিকবিদ এবং গবেষণার সহ-লেখক ওয়েইজিয়া কুয়াং বলেন, “এই দুই তথ্যভাণ্ডার অবিশ্বাস্যরকমভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। পৃথিবী একমাত্র পরিচিত গ্রহ যেখানে জটিল প্রাণ বাস করে। আমরা যে সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছি তা জীবনের বিকাশ এবং পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার মধ্যে সংযোগ বুঝতে সাহায্য করতে পারে।”
কুয়াং এবং তাঁর সহকর্মীরা যখন পৃথকভাবে চৌম্বক ক্ষেত্র এবং অক্সিজেনের তথ্য বিশ্লেষণ করেন, তখন দেখা যায়—এই দুই উপাদান একে অপরের সঙ্গে মিল রেখে প্রায় অর্ধ বিলিয়ন বছর ধরে ওঠানামা করেছে। এই মিল দেখা গেছে ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণের সময়কাল থেকেই, যখন পৃথিবীতে প্রথম জটিল জীবনের বিকাশ ঘটেছিল।
এই গবেষণা নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে বিজ্ঞানীদের—পৃথিবীর অভ্যন্তরের গতিপ্রকৃতি শুধুমাত্র ভূগর্ভেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা সরাসরি পৃথিবীর পৃষ্ঠে প্রাণ ও পরিবেশের গঠনেও প্রভাব ফেলে।
এই গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে যে, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ জিওডাইনামো এবং বাইরের বায়ুমণ্ডলীয় পরিবেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এটি ভবিষ্যতের গবেষণায় সাহায্য করতে পারে ভিন্ন গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্যতা মূল্যায়নেও, যেখানে চৌম্বক ক্ষেত্র ও বায়ুমণ্ডলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।