
কল্পনা করুন এমন এক গ্রহ যেখানে বায়ুমণ্ডল এখনো পুরোপুরি গঠিত হয়নি—অথচ আমরা তা প্রত্যক্ষ করতে পারছি আমাদের অত্যাধুনিক টেলিস্কোপের মাধ্যমে। এমনই এক রহস্যময় গ্রহ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যার নাম দেওয়া হয়েছে ” K2-113b “। এই গ্রহটি দেখতে অনেকটা পৃথিবীর মতো হলেও এর একটি বিশেষত্ব হলো—এটি তার নক্ষত্রের খুব কাছাকাছি ঘুরছে। ফলে নক্ষত্রের তীব্র বিকিরণ বা উত্তাপ এই গ্রহের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে এবং এটি এখনো অ্যাকটিভ আগ্নেয়গিরি কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
এই আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ থেকে নির্গত গ্যাস ও ধোঁয়ার কারণে ধারণা করা হচ্ছে, এই গ্রহটি বর্তমানে একটি নতুন বায়ুমণ্ডল গঠন করছে। গবেষকেরা বলছেন, এটি যেন পৃথিবীর অতীত ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি—যেখানে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং গ্যাসের নির্গমনই গঠন করেছিল আমাদের বায়ুমণ্ডল।
বিষয়টি আরো বিস্ময়কর হয় এই কারণে যে, আমরা বাস্তব সময়েই এই প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে পারছি। সাধারণত গ্রহের বায়ুমণ্ডল গঠনের মতো দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া মানুষের জীবদ্দশায় দেখা অসম্ভব বলেই মনে করা হতো। কিন্তু এখন, স্পেস টেলিস্কোপ এবং এক্সোপ্ল্যানেট গবেষণার অগ্রগতির ফলে, এই ধরনের বিরল ঘটনাও আমাদের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে।
এই গ্রহের ওপর গবেষণা চলছে নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA), এবং অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা সংস্থার সম্মিলিত প্রয়াসে। বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে, এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আমরা আরো ভালোভাবে বুঝতে পারব—কিভাবে একেকটি গ্রহ ধাপে ধাপে একটি প্রাণবাহিত গ্রহে পরিণত হয়।
এই রকম নতুন বায়ুমণ্ডলের গঠন এবং তার রসায়ন বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে আমরা হয়তো এমন গ্রহের সন্ধানও পেতে পারি, যেখানে প্রাণের সম্ভাবনা বিদ্যমান। মহাবিশ্বের অসীম বিস্তারে এই ধরণের গবেষণাই আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ‘কোথা থেকে এসেছি’ এবং ‘কোথায় যাচ্ছি’ এই চিরন্তন প্রশ্নগুলোর উত্তরের দিকে।