
(আল মামুন রিটন) সাহিত্য এবং সাহিত্যিক যখন সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে, তখন সেটা অনেকটাই একটা দ্বৈত সত্তার সংঘাতের মতো। একদিকে সাহিত্যিকের সৃষ্টিশীল মনের প্রকাশ, অন্যদিকে তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস, আদর্শ বা সামাজিক অবস্থানের টানাপোড়েন। এই সংঘর্ষ সৃষ্টি হতে পারে বিভিন্ন কারণে—ব্যক্তিগত মূল্যবোধের সঙ্গে সাহিত্যের বিষয়বস্তুর দ্বন্দ্ব, সমাজ বা পাঠকের প্রত্যাশার বিপরীতে লেখকের স্বাধীনচিন্তার অবস্থান, অথবা রাজনৈতিক ও আদর্শিক মতপার্থক্য।
ধরা যাক, একজন সাহিত্যিক মুক্তচিন্তার ধারক, কিন্তু তার রচিত সাহিত্য কোনোকোনো সময় তার নিজের বিশ্বাস বা আদর্শের বিরোধিতা করছে। হয়তো তিনি এমন একটি চরিত্র সৃষ্টি করেছেন, যে সমাজবিরোধী কিংবা তার নিজের নৈতিক অবস্থানের বিপরীত। এই ধরনের লেখা তার মানসিক দ্বন্দ্ব তৈরি করতে পারে। আবার, কোনো সাহিত্যিক হয়তো স্বাধীনভাবে তার সাহিত্য প্রকাশ করতে চান, কিন্তু রাজনৈতিক, সামাজিক বা ধর্মীয় বাধা তাকে তা করতে দিচ্ছে না। তখন সাহিত্য এবং সাহিত্যিকের মধ্যকার এই সংঘর্ষ আরও প্রবল হয়ে ওঠে।
ইতিহাসে আমরা দেখেছি, অনেক সাহিত্যিক তাদের সময়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়েছেন। কখনো রাষ্ট্রের সঙ্গে, কখনো সমাজের সঙ্গে, কখনোবা নিজের ভেতরের সংকটের সঙ্গে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম যখন বিদ্রোহের সুর তুলেছিলেন, তখন সমাজ-রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। আবার জীবনানন্দ দাশ তার নিজের রচনার গভীরে এক ধরনের একাকিত্ব ও দ্বন্দ্ব অনুভব করেছেন, যেখানে তিনি নিজের সাহিত্য ও বাস্তব জীবনের মধ্যে ফারাক খুঁজে পেয়েছেন।
এমন সংঘর্ষের পরিণতি বিভিন্ন হতে পারে—কখনো সাহিত্যিক নিজেকে বদলে নেন, কখনো তিনি তার সাহিত্যের মাধ্যমেই প্রতিবাদ জানান, আবার কখনো সমাজের চাপে তার সাহিত্য ধ্বংস হয়ে যায় বা নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু একথা সত্য যে, এই সংঘর্ষই অনেক সময় নতুন ধারা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি বা নতুন আন্দোলনের জন্ম দেয়, যা সাহিত্যের গতিপথ বদলে দিতে পারে।