
পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক নীতি যা বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। যখন কোনো দেশে বা অঞ্চলে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে, তখন বিক্রেতা এবং ক্রেতার মধ্যে একটি ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। এই ভারসাম্য বজায় থাকলে বাজার ব্যবস্থা স্বাভাবিক গতিতে চলে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে ন্যায্যতা বজায় থাকে।
স্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণের ফলে ক্রেতারা তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে প্রয়োজনীয় পণ্য সহজে পেয়ে থাকে। সরকার যদি বাজারে নজরদারি রাখে এবং অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি রোধ করে, তাহলে সাধারণ মানুষ আর্থিক চাপে না পড়ে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে দাম নির্ধারণের নীতি ক্রেতাদের জন্য একটি সুরক্ষা বলয় তৈরি করে। ফলে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণি সহজে তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে।
অন্যদিকে, বিক্রেতারা যখন নির্দিষ্ট মূল্যসীমার মধ্যে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হয়, তখন তাদের লাভের একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারিত হয়। এটি অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ কমিয়ে দেয়, ফলে বাজারে প্রতিযোগিতা সুষমভাবে বজায় থাকে। তবে এটি তখনই কার্যকর হয় যখন দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়া বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। ন্যায্য দাম নিশ্চিত হলে বিক্রেতারা উৎপাদনে আগ্রহী হয় এবং বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ বজায় থাকে।
যখন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়, তখন অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার লোভে দাম বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে বাজারে সংকট তৈরি হয়। অপরদিকে, অতিরিক্ত কঠোর নিয়ন্ত্রণ বিক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে এবং তারা উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। ফলে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয়। তাই, ক্রেতা ও বিক্রেতার স্বার্থ রক্ষা করতে হলে একটি ভারসাম্যপূর্ণ দাম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অপরিহার্য।
সঠিক মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখে এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। সরকারের নীতিগত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে যখন দাম নিয়ন্ত্রণ সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তখন বাজারে স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় থাকে। সুতরাং, ক্রেতা ও বিক্রেতার স্বার্থ রক্ষায় সুপরিকল্পিত মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা একটি অপরিহার্য উপাদান।