জ্যোতির্বিজ্ঞান

মহাকাশ থেকে প্রথম ঐতিহাসিক জাম্প

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার থেকে ইতিহাস গড়া লাফ: ফেলিক্স বাউমগার্টনারের ভয়ংকর মিশন

পৃথিবীর আকাশের উপরের স্তর, যাকে বলা হয় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার, সেই স্তর থেকে লাফিয়ে পড়ে পৃথিবীর মাটিতে নিরাপদে অবতরণ করার কথা চিন্তা করলেই শরীর শিউরে ওঠে। হাজার হাজার ফুট উঁচুতে যেখানে অক্সিজেন নেই, তাপমাত্রা মাইনাস ৭০ ডিগ্রির নিচে, সেখান থেকে লাফ দেয়া কি মানুষের সাধ্যের মধ্যে পড়ে? এই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছিলেন একজন অস্ট্রিয়ান সাহসী মানুষ, ফেলিক্স বাউমগার্টনার। ২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর তিনি ইতিহাস গড়েন এমন এক কাজ করে, যেটি শুধু সাহস নয়, বরং মানব সভ্যতার প্রযুক্তি, বিজ্ঞান আর মানসিক শক্তির এক যুগান্তকারী পরীক্ষার নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মিশনটির নাম ছিল ‘রেড বুল স্ট্র্যাটোস‘, যেখানে তাকে ৩৯ কিলোমিটার বা প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার ফুট উচ্চতায় হেলিয়াম গ্যাসে ভরা একটি বিশেষ বেলুনে করে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তিনি পৃথিবীর দিকে ফ্রি-ফল জাম্প দেন, যার সময় তিনি শব্দের গতিকে অতিক্রম করে ফেলেন—যা আগে কোনো মানুষ কোনো বাহ্যিক যন্ত্র ছাড়া করতে পারেননি। অর্থাৎ, তিনি পৃথিবীতে প্রথম ব্যক্তি, যিনি নিজের শরীরের মাধ্যমে শব্দের গতির চেয়েও বেশি গতিতে চলেছেন। এই লাফের সময় তার সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ১,৩৫৭.৬ কিলোমিটার, যা শব্দের গতি ছাড়িয়ে যায়। পুরো পৃথিবী তাকিয়ে ছিল সেদিন আকাশের দিকে, কিভাবে একজন মানুষ নিজেকে মৃত্যুর কিনারায় নিয়ে গিয়ে বিজ্ঞান আর আত্মবিশ্বাসের শক্তিতে এক অবিশ্বাস্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। প্রায় চার মিনিটেরও বেশি সময় ধরে তিনি ফ্রি-ফল করেন, তারপরে প্যারাশুট খুলে সফলভাবে পৃথিবীর মাটিতে নামেন। এই অবতরণের মাধ্যমে ফেলিক্স প্রমাণ করেন, মানবসীমা আসলে কোথায় সেটা প্রযুক্তি আর ইচ্ছাশক্তির উপর নির্ভর করে। এই ঘটনাটি শুধু একটি রেকর্ড নয়, বরং ভবিষ্যতের মহাকাশ ভ্রমণ ও উচ্চ উচ্চতা থেকে জরুরি অবতরণের মতো গবেষণায়ও বড় অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞান ও মহাকাশ গবেষণায় যারা ঝুঁকি নিয়ে সাহস দেখাতে প্রস্তুত, তাদের জন্য ফেলিক্স বাউমগার্টনার একটি চিরস্মরণীয় নাম।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button