বিজ্ঞান আলাপস্বাস্থ্য আলাপ

শুক্রাণুর দৌড় নয় ডিম্বাণুর ইচ্ছাও গুরুত্বপূর্ণ?

মানুষের প্রজনন প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধারণা ছিল যে, লক্ষ লক্ষ শুক্রাণু একটি ডিম্বাণুর দিকে সাঁতার কেটে যায়, এবং তাদের মধ্যে মাত্র একটি নিষেকে সফল হয়। এই প্রক্রিয়ায় শুক্রাণুর গতিশীলতা ও শক্তিই প্রধান ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডিম্বাণুও নিষেক প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় এবং নির্দিষ্ট শুক্রাণুকে আকর্ষণ করতে রাসায়নিক সংকেত ব্যবহার করে।
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট এবং সুইডেনের স্টকহোম ইউনিভার্সিটির গবেষকদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণার ফলাফল “Chemical signals from eggs facilitate cryptic female choice in humans” শিরোনামে The Royal Society Publishing এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটি ম্যানচেস্টারের সেন্ট ম্যারি’স হাসপাতালে আইভিএফ (In vitro fertilization) এবং আইসিএসআই (Intra Cytoplasmic Sperm Injection) প্রক্রিয়ার জন্য আসা দম্পতিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা শুক্রাণু এবং ফলিকুলার ফ্লুইডের নমুনার ওপর ভিত্তি করে করা হয়।
গবেষকদের মতে, গর্ভাশয়ের ফলিকল টিউব থেকে নিঃসৃত ফলিকুলার ফ্লুইডে থাকা রাসায়নিক পদার্থ বা Chemo-attractants শুক্রাণুর গতিপথকে প্রভাবিত করে। এই তরল নির্দিষ্ট শুক্রাণুকে আকর্ষণ করে এবং তাদের সাঁতারের গতি বাড়িয়ে দেয়, যাকে কেমোকাইনেসিস বলা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিম্বাণু কোন শুক্রাণুর সঙ্গে নিষেক হবে, তা নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গবেষক দলটি মাইক্রোস্কোপিক পর্যায়ে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মধ্যে এই রাসায়নিক যোগাযোগ বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করেছে। তারা লক্ষ্য করেছে, নারীর প্রজনন ট্র্যাক্টে শুক্রাণু মুক্ত হওয়ার পর সেগুলো ফলিকল টিউবের দিকে এগিয়ে যায়। এই টিউবে পৌঁছানো শুক্রাণুগুলো ফলিকুলার ফ্লুইডের সংস্পর্শে এলে তাদের গতিশীলতায় পার্থক্য দেখা যায়। এই পার্থক্য শুক্রাণুর ডিফারেনশিয়াল কেমোট্যাকটিক প্রতিক্রিয়া বা সাঁতারের গতির ভিন্নতার কারণে ঘটে।
গবেষণার প্রধান ফলাফল হলো, ফলিকুলার ফ্লুইড ধারাবাহিকভাবে এবং পৃথকভাবে নির্দিষ্ট শুক্রাণুকে আকর্ষণ করে। এটি কেবল মানুষের ক্ষেত্রেই নয়, বিভিন্ন প্রজাতির জীবের মধ্যেও দেখা গেছে। গবেষকদের মতে, এই রাসায়নিক সংকেত নিষেক প্রক্রিয়ার সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং নারীর প্রজনন ব্যবস্থাকে আরও সক্রিয় ও নিয়ন্ত্রিত হিসেবে চিহ্নিত করে।
এই গবেষণা প্রজনন বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি শুধু প্রজনন প্রক্রিয়ার জটিলতা বোঝাতেই সাহায্য করছে না, বরং আইভিএফ-এর মতো প্রযুক্তির উন্নতিতেও ভূমিকা রাখতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ফলিকুলার ফ্লুইড ও শুক্রাণুর এই রাসায়নিক মিথস্ক্রিয়া আরও গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে প্রজনন স্বাস্থ্য ও উর্বরতা চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।
সূত্র: The Royal Society Publishing, ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, স্টকহোম ইউনিভার্সিটি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button