
সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে থাকা প্রবাল প্রাচীর পৃথিবীর অমূল্য সম্পদ। এটি সামুদ্রিক প্রাণীদের আশ্রয়স্থল এবং মানবজীবনেরও সহায়ক। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা সলোমন দ্বীপপুঞ্জে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবাল কলোনি আবিষ্কার করেছেন, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে টিকে আছে। এই আবিষ্কার প্রবালের সহনশীলতা এবং সামুদ্রিক সংরক্ষণের গুরুত্বকে নতুন করে তুলে ধরেছে।
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের মালাউলালো দ্বীপের কাছে এই বিশাল প্রবাল কলোনিটি পাওয়া গেছে। এটি পাভোনা ক্লাভাস প্রজাতির, যার আকার ৩৪ মিটার চওড়া, ৩২ মিটার লম্বা এবং ৫.৫ মিটার উঁচু। এটি আগের রেকর্ডধারী আমেরিকান সামোয়ার প্রবালের চেয়েও ১২ মিটার বড়!
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রিস্টিন সিস অভিযানের সময় ডুবুরিরা এই প্রবালটি আবিষ্কার করেন। ভিডিওগ্রাফার মানু সান ফেলিক্সের নেতৃত্বে একটি দল জাহাজডুবির স্থান অনুসন্ধান করতে গিয়ে হঠাৎই এই বিশাল প্রবালের সন্ধান পায়।
সাধারণ প্রবাল প্রাচীর অনেকগুলো কলোনির সমন্বয়ে গঠিত, কিন্তু এটি একক একটি জীব, যা লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র পলিপের সমষ্টি। অবাক করা তথ্য হলো এটা প্রায় ৩০০ বছর টিকে আছে।
এই আবিষ্কার আশাবাদী হলেও, বিশ্বজুড়ে প্রবাল প্রাচীরের অবস্থা উদ্বেগজনক। সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে প্রবালের সিম্বায়োটিক শৈবাল (যা তাদের খাদ্য সরবরাহ করে) বেরিয়ে যাচ্ছে, ফলে প্রবাল ফ্যাকাশে হয়ে মারা যাচ্ছে। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের অগভীর প্রবালগুলিও উষ্ণতা ও দূষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তবে এই বিশাল প্রবালটি সম্ভবত গভীর ও ঠান্ডা পানির কারণে টিকে আছে, যা বিজ্ঞানীদের জন্য গবেষণার নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। এই প্রাচীন কলোনি থেকে শেখা পাঠ ভবিষ্যতে প্রবাল সংরক্ষণে সাহায্য করতে পারে, বিশেষত যখন ৪৪% হার্ড কোরাল প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে।
এই আবিষ্কারের পর সলোমন দ্বীপপুঞ্জের স্থানীয় সম্প্রদায় মালাউলালোর জলসীমা সংরক্ষণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। জলবায়ু মন্ত্রী ট্রেভর মানেমাহাগা COP29-এ প্রবাল প্রাচীরের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত গুরুত্ব তুলে ধরে টেকসই বিকাশের আহ্বান জানিয়েছেন।
বৈশ্বিকভাবে, এই আবিষ্কার প্রবালের গুরুত্বকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে—জীববৈচিত্র্য রক্ষা, উপকূলের সুরক্ষা এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকার জন্য প্রবাল অপরিহার্য। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় এখনই সংরক্ষণ জরুরি।
Dd/June