
মানবসভ্যতার ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ আবিষ্কার হল পারমাণবিক শক্তি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আশীর্বাদস্বরূপ এটি যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়ক, তেমনি যুদ্ধক্ষেত্রে এটি এক মারাত্মক ধ্বংসযন্ত্রে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশ পারমাণবিক শক্তির মালিক, যা বিশ্বশান্তির জন্য এক বিরাট হুমকি হিসেবে বিবেচিত। এই পরিস্থিতি কেবল একটি দেশের নয়, সমগ্র মানবজাতির অস্তিত্বের প্রশ্ন।
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ পৃথিবীকে প্রথমবারের মতো এই শক্তির ভয়াবহতা অনুভব করায়। কয়েক সেকেন্ডেই শহর দু’টি ছাইয়ে পরিণত হয়, লাখো মানুষের প্রাণ যায়।
আজকের যুগে পারমাণবিক বোমা হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী, যা একাধিক শহর ধ্বংস করতে পারে। এমনকি বিশ্বজুড়ে আবহাওয়াও দীর্ঘমেয়াদে পরিবর্তিত হতে পারে – যাকে বলা হয় নিউক্লিয়ার উইন্টার।
জঙ্গি সংগঠনের হাতে যদি পারমাণবিক প্রযুক্তি বা ‘ডার্টি বোমা’ পৌঁছায়, তবে তা শহরের উপর অভাবনীয় আতঙ্ক নেমে আসবে। তাই বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক উপকরণ ও প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ এখন সময়ের দাবী।
বিশ্বের শক্তিধর পারমাণবিক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে এক অদৃশ্য ভারসাম্য বজায় রয়েছে। কারণ কেউ আক্রমণ করলে প্রতিপক্ষ পাল্টা আঘাত করবে – যার ফলাফল হবে পরস্পরের ধ্বংস। এই ভয়ই এখন যুদ্ধ ঠেকানোর ‘নীরব কৌশল’।
Nuclear Non-Proliferation Treaty (NPT) এমন একটি বৈশ্বিক চুক্তি, যার মাধ্যমে নতুন দেশগুলোকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা এবং অস্ত্রধারী দেশগুলোকে নিরস্ত্রীকরণের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
ভারত-পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান-ইসরায়েল— এসব অঞ্চলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পারমাণবিক অস্ত্র রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি ও প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পারমাণবিক শক্তি একদিকে সভ্যতার উৎকর্ষ, অন্যদিকে ধ্বংসের সম্ভাব্য চূড়ান্ত রূপ। এর ব্যবহার যদি সীমিত ও সচেতনভাবে না হয়, তবে তা কেবল একটি নয়, সমগ্র মানবজাতিকে বিলুপ্তির পথে নিয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের প্রয়োজন সাহসিকতা, সংহতি এবং দূরদৃষ্টি— পারমাণবিক অস্ত্রের নয়, শান্তির পক্ষে বিশ্ব গড়ার।