
বিজ্ঞানীরা এখন মনে করছেন, আমাদের নিজস্ব গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ে শুধু ৬০০ কিমি প্রতি সেকেন্ড বেগে মহাকাশে ছুটে চলাই নয়, বরং তা যেন নিজের ডানা ঝাপটাচ্ছে—একটি বিশাল, অদৃশ্য প্রজাপতির মতো! এই কল্পনার পেছনে রয়েছে একটি অসাধারণ নীহারিকার ছবি, যা ইউরোপীয় সাউদার্ন অবজারভেটরির ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ দিয়ে ধারণ করা হয়েছে। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক মহাজাগতিক প্রজাপতির অবয়ব, যার নাম NGC 2899। এই প্রজাপতির মতো নীহারিকাটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৩,০০০ থেকে ৬,৫০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে, আর মনে হচ্ছে যেন তা নিঃশব্দে মহাকাশের শূন্যতায় ভাসছে। কিন্তু বাস্তবে এটি মোটেই শান্ত নয়—বরং এর উৎপত্তি এক অস্থির, বিশৃঙ্খল মহাজাগতিক ঘটনার ফল। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, এই গ্রহীয় নীহারিকাটি গঠিত হয়েছে দুটি নক্ষত্রের মিশ্র প্রক্রিয়ায়। তাদের মধ্যে একটি, যেটি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল, তার বাইরের স্তর ত্যাগ করে দেয়। অন্যটি সেই ত্যাগ করা গ্যাসের প্রবাহে জড়িয়ে পড়ে এবং একধরনের গ্যাসীয় নৃত্য শুরু হয়, যার ফলেই তৈরি হয় এই অসাধারণ প্রজাপতির আকৃতি। এই গ্যাসীয় কুয়াশা প্রায় দুই আলোকবর্ষ জুড়ে বিস্তৃত, আর তার মধ্য দিয়ে তীব্র তাপে উদ্ভাসিত বিকিরণ চারপাশকে আলোয় ভরিয়ে তোলে। গ্যাসের তাপমাত্রা ১০,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি ছুঁতে পারে, যা মূলত কেন্দ্রস্থ নক্ষত্র থেকে নির্গত শক্তির কারণে ঘটে। এই দৃশ্য শুধু চোখ ধাঁধানো নয়, বরং মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির গঠন ও বিকাশ সম্পর্কে আমাদের বোঝার পরিধিকেও প্রসারিত করে। মনে হয়, পুরো গ্যালাক্সি যেন প্রাণ পেয়েছে, নাচছে, উড়ছে—আর তার ছায়ায় জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন রহস্য।