
মহাকাশের বিশালতা এবং রহস্যময়তা আমাদের সবসময়ই আকর্ষণ করে। এই অনন্ত মহাবিশ্বে আমাদের পৃথিবী একটি ক্ষুদ্র বিন্দুর মতো। কিন্তু কীভাবে এই পৃথিবী শূন্যে ভেসে থাকে? কীভাবে এটি সূর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকে? এই প্রশ্নগুলি আমাদের সকলের মনে একবার হলেও উঁকি দিয়েছে। আজকের এই ভিডিওতে আমরা এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজবো। আমরা জানবো, কীভাবে সৌরজগতের গ্রহগুলি, বিশেষ করে পৃথিবী, মহাশূন্যে ভেসে ভেসে সূর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকে।
আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে রয়েছে সূর্য, একটি বিশাল নক্ষত্র। সূর্যের ভর সৌরজগতের মোট ভরের ৯৯.৮৬%। এই বিশাল ভরের কারণে সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অত্যন্ত শক্তিশালী। এই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সূর্যের চারপাশের সকল গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু এবং অন্যান্য মহাকাশীয় বস্তুকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। কিন্তু এই আকর্ষণ শক্তির কারণে গ্রহগুলি সূর্যের দিকে পড়ে না। বরং, তারা সূর্যের চারপাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরতে থাকে।
পৃথিবী যদি স্থির থাকত, তাহলে সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি তাকে নিজের দিকে টেনে নিত। কিন্তু পৃথিবী শুধু স্থির নেই, এটি একটি নির্দিষ্ট গতিতে সূর্যের চারপাশে ঘুরছে। এই গতিকে বলা হয় ‘কক্ষপথীয় গতি’ বা ‘অরবিটাল ভেলোসিটি’। পৃথিবীর এই গতি এবং সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি হয়। এই ভারসাম্যের কারণেই পৃথিবী সূর্যের দিকে পড়ে না, আবার মহাকাশেও হারিয়ে যায় না। এটি একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরতে থাকে।
এই ঘটনাটি বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। নিউটনের মতে, মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু একে অপরকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ শক্তি দুটি বস্তুর ভরের উপর নির্ভর করে। সূর্যের ভর পৃথিবীর চেয়ে অনেক বেশি, তাই সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীকে তার দিকে টানে। কিন্তু পৃথিবীর কক্ষপথীয় গতির কারণে এটি সূর্যের দিকে পড়ে না, বরং একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ঘুরতে থাকে।
জোহানেস কেপলারের গ্রহীয় গতি সূত্র অনুযায়ী, প্রতিটি গ্রহ সূর্যের চারপাশে একটি উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরে। এই কক্ষপথে সূর্য একটি ফোকাসে অবস্থান করে। কেপলারের দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী, একটি গ্রহ সূর্যের কাছাকাছি থাকলে তার গতি বেড়ে যায়, আর দূরে থাকলে গতি কমে যায়। এই সূত্রগুলি গ্রহগুলির গতি এবং কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করে।
পৃথিবীর মতো সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহগুলিও সূর্যের চারপাশে ঘুরছে। প্রতিটি গ্রহের কক্ষপথ এবং গতি আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, বুধ সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ, তাই এর কক্ষপথ সবচেয়ে ছোট এবং এটি সবচেয়ে দ্রুত গতিতে ঘুরে। অন্যদিকে, নেপচুন সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত, তাই এর কক্ষপথ বড় এবং এটি ধীর গতিতে ঘুরে। প্রতিটি গ্রহের কক্ষপথীয় গতি এবং সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় থাকে, যা তাদেরকে স্থিতিশীল কক্ষপথে ঘুরতে সাহায্য করে।
সৌরজগতের এই স্থিতিশীলতা এবং গ্রহগুলির কক্ষপথের ভারসাম্য বজায় রাখে মহাকর্ষ শক্তি। সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি গ্রহগুলিকে নিজের দিকে টানে, আর গ্রহগুলির কক্ষপথীয় গতি তাদের সূর্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। এই দুটি শক্তির মধ্যে সামঞ্জস্য থাকার কারণেই সৌরজগতের প্রতিটি গ্রহ, উপগ্রহ এবং অন্যান্য বস্তু একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরতে পারে। যদি এই ভারসাম্য নষ্ট হয়, তাহলে গ্রহগুলি হয় সূর্যের দিকে পড়ে যাবে, নয়তো মহাকাশে হারিয়ে যাবে।
মহাকাশের এই রহস্যগুলো আজও বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়। আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্য জানতে পারছি, যা আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে। ভবিষ্যতে আরও অনেক রহস্য উন্মোচিত হবে, যা আমাদের জ্ঞানের পরিধিকে আরও বাড়িয়ে দেবে। মহাকাশ গবেষণার মাধ্যমে আমরা শুধু আমাদের সৌরজগতই নয়, বরং অন্যান্য নক্ষত্রপুঞ্জ এবং গ্যালাক্সি সম্পর্কেও জানতে পারবো।