জ্যোতির্বিজ্ঞান

সোম্ব্রেরো গ্যালাক্সি ধ্বংস, সংমিশ্রণ ও সৌন্দর্যের এক অনন্য প্রতীক

সোম্ব্রেরো গ্যালাক্সিটি এমন এক মহাজাগতিক সৌন্দর্যের প্রতীক, যার গঠন ও অতীত গবেষকদের বারবার বিস্মিত করেছে। পৃথিবী থেকে প্রায় ৩০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই গ্যালাক্সিটি ভার্গো গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের প্রান্তসীমায় রয়েছে এবং বিশাল ভরসমৃদ্ধ—যার ওজন প্রায় ৮০০ বিলিয়ন সূর্যের সমান। আমরা এই গ্যালাক্সিটিকে পাশ থেকে দেখতে পাই বলে এর আকৃতি একটি মেক্সিকান টুপির মতো মনে হয়, যার নাম থেকেই এসেছে এর “সোম্ব্রেরো” নামকরণ। তবে এই মসৃণ ও সুসংহত রূপের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে এক অস্থির ও সহিংস ইতিহাস।

গবেষণায় উঠে এসেছে যে সোম্ব্রেরো গ্যালাক্সিটি একসময় অন্য একটি গ্যালাক্সির সঙ্গে একত্রীকরণের মাধ্যমে ভয়ংকর সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়েছিল। সেই সংঘর্ষের প্রমাণ আজও রয়ে গেছে গ্যালাক্সিটির অভ্যন্তরে, বিশেষ করে এর গ্লোবুলার ক্লাস্টারগুলির মধ্যে। এই ক্লাস্টারগুলি হলো গ্যালাক্সির প্রাচীন ইতিহাসের জীবন্ত দলিল—প্রায় ২০০০ গ্লোবুলার ক্লাস্টার, প্রতিটিতে লক্ষ লক্ষ পুরানো তারা। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হলো, একই সময়ে ও উপাদানে গঠিত হওয়ার পরও এই তারাগুলির রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য একে অপরের থেকে আলাদা। অক্সিজেন, নিয়ন বা অন্যান্য মৌলিক উপাদানের পরিমাণে পার্থক্য এই ধারণাকে শক্ত করে যে, এগুলি একক উৎস থেকে উদ্ভূত নয় বরং বিভিন্ন উৎস ও সময়ের ফসল।

এই অপ্রত্যাশিত বৈচিত্র্য একমাত্র ব্যাখ্যা করা যায় যদি ধরা হয় যে এই গ্যালাক্সিটি বহু গ্যালাক্সির সংমিশ্রণ থেকে গঠিত হয়েছে—যেখানে প্রতিটি নতুন আগত গ্যালাক্সি নিজ নিজ গ্লোবুলার ক্লাস্টার নিয়ে এসেছে, এবং এক জায়গায় এসে এগুলো একত্রিত হয়েছে। এই ধারণাকে আরও জোরালো করে সোম্ব্রেরোর অভ্যন্তরীণ ডিস্কের অদ্ভুত গঠন। যদিও আমরা এটিকে পাশ থেকে দেখছি বলে মনে হয়, বাস্তবে এটি সরাসরি পাশে নয়, বরং ছয় ডিগ্রি ওপর থেকে দেখা যাচ্ছে। সেই কারণে গ্যালাক্সির ভেতরের ডিস্ক একটি হেলানো ফানেলের মতো দেখায়, যা সম্ভবত একত্রীকরণের সময় সৃষ্ট গঠনগত বিকৃতির প্রমাণ।

সোম্ব্রেরো গ্যালাক্সি তাই শুধুই একটি দর্শনীয় জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু নয়, বরং এটি এক গ্যালাকটিক স্মারক যা মনে করিয়ে দেয় যে মহাবিশ্বের সৌন্দর্য অনেক সময় সংঘর্ষ ও পুনর্গঠনের মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে। প্রতিটি তারা, প্রতিটি ধুলোর রেখা ও প্রতিটি বিকৃতি এই গ্যালাক্সির অতীতের কাহিনির পৃষ্ঠা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে—যেন অসীম সময়ের গভীরে হারিয়ে যাওয়া এক মহাজাগতিক উপাখ্যান।

ছবি ক্রেডিট: নাসা/জে,পি,এল

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button