ভিন্ন আলাপ

হাবল টেলিস্কোপে ধরা পড়ল ছটফট করা দুটি ছায়াপথের দ্বন্দ্বময় সম্পর্ক

নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ESA) যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হাবল স্পেস টেলিস্কোপ এবার একটি চমকপ্রদ মহাজাগতিক দৃশ্য ধারণ করেছে—যেখানে দেখা যাচ্ছে “আর্প ৮৬” নামের দুটি মিথস্ক্রিয়াশীল ছায়াপথের ঘনিষ্ঠ এবং উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক। পৃথিবী থেকে প্রায় ২২ কোটি আলোকবর্ষ দূরে, পেগাসাস নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত এই জোড়া ছায়াপথ আসলে দুটি পৃথক ছায়াপথের সংমিশ্রণ—এনজিসি ৭৭৫৩ এবং তার ক্ষুদ্র সঙ্গী এনজিসি ৭৭৫২। ছবিতে বড় আকারের স্পাইরাল ছায়াপথটি হচ্ছে এনজিসি ৭৭৫৩ এবং তার গায়ে প্রায় লেগে থাকা ছোট ছায়াপথটিই এনজিসি ৭৭৫২। এই ঘনিষ্ঠ ও অস্বাভাবিক বিন্যাসই একে স্থান দিয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞানী হ্যাল্টন আর্পের ১৯৬৬ সালের “অ্যাটলাস অব পিকিউলিয়ার গ্যালাক্সিজ”-এ, যেখানে এই জোড়াকে “আর্প ৮৬” নামে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই দুটি ছায়াপথের মধ্যে এক ধরনের মহাকর্ষীয় লড়াই চলছে, যার পরিণতি খুব একটা শুভ হবে না এনজিসি ৭৭৫২-এর জন্য। হয় সেটি শক্তিশালী আকর্ষণে তার বড় সঙ্গীর ভেতরে মিশে যাবে, না হয় ছিটকে গিয়ে হারিয়ে যাবে আন্তঃছায়াপথিক শূন্যতায়।

হাবল টেলিস্কোপ এই জোড়া ছায়াপথকে পর্যবেক্ষণ করেছে তার বৃহত্তর এক গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে, যার লক্ষ্য হলো তারুণ্যপ্রাপ্ত নক্ষত্র ও তাদের জন্মদাত্রী শীতল গ্যাসমেঘগুলোর মধ্যে সম্পর্ক অনুধাবন করা। বিভিন্ন ধরনের পরিবেশে ছড়িয়ে থাকা নক্ষত্রপুঞ্জ ও গ্যাস-ধূলি মেঘের মধ্য দিয়ে হাবল সংগ্রহ করেছে অমূল্য সব তথ্য। আর সেই তথ্যের সঙ্গে চিলির আন্দিজ পর্বতের চূড়ায় অবস্থিত বিশাল রেডিও টেলিস্কোপ ALMA-এর পরিমাপ মিলিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এখন তারার জন্ম রহস্য উন্মোচনের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছেন।

এই পর্যবেক্ষণই ভবিষ্যতের গবেষণার বীজ বপন করেছে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের স্পেস টেলিস্কোপ, নাসা ও ESA-এর যৌথ উদ্যোগে নির্মিত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST)-এর জন্য। এই টেলিস্কোপ, যেটি শিগগিরই মহাকাশে যাত্রা শুরু করবে, তার লক্ষ্য হবে ধূলিময় অঞ্চলে তারার জন্মবৃত্তান্ত অনুসন্ধান করা—যেমনটি ঘটছে এই আর্প ৮৬ ছায়াপথ জোড়ার অভ্যন্তরে।___________________
ক্রেডিট: ESA/Hubble এবং NASA, ডার্ক এনার্জি সার্ভে, জে. ডালকান্টন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button