
মানুষ যখন মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে, তখন কখনো কখনো এমন কিছু আবিষ্কার হয়, যা আমাদের চিন্তার সীমাকে প্রসারিত করে। এমনই এক আশ্চর্য আবিষ্কার হলো PSO J318.5-22। এটি ২০১৩ সালে বিজ্ঞানীদের নজরে আসে এবং একে “বিচ্ছিন্ন গ্রহ” (Rogue Planet) বলা হয়। এই গ্রহের সবচেয়ে অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হলো—এর কোনো নক্ষত্র নেই!
২০১৩ সালে Pan-STARRS 1 (Panoramic Survey Telescope and Rapid Response System) দ্বারা PSO J318.5-22 গ্রহটি শনাক্ত করা হয়। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৮০ আলোকবর্ষ দূরে Capricornus (মকর) নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত।
সাধারণত, আমরা যে গ্রহগুলোর কথা বলি, তারা কোনো না কোনো নক্ষত্রের চারদিকে প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু PSO J318.5-22 একা, স্বাধীন এবং মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এটিকে “Rogue Planet” বা ভ্রাম্যমাণ গ্রহ বলছেন, কারণ এটি কোনো নক্ষত্রের অভিকর্ষ বলয়ের অধীন নেই।
PSO J318.5-22 এর কিছু আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে—
এটি কোনো নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে না, বরং নিজেই মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছে।
এর ভর বৃহস্পতির (Jupiter) প্রায় ৬.৫ গুণ।
এটি একটি তরুণ গ্রহ, যার বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা প্রায় ৮০০°C (১৪৭০°F)।
এটি প্রায় ১২ মিলিয়ন বছর আগে গঠিত হয়েছিল, যা তুলনামূলকভাবে মহাবিশ্বের বয়সের তুলনায় খুবই অল্প সময়।
কীভাবে PSO J318.5-22 গঠিত হলো?
বিজ্ঞানীদের মতে, PSO J318.5-22 সম্ভবত কোনো একসময় একটি নক্ষত্রের চারদিকে আবর্তিত হচ্ছিল, কিন্তু কোনো মহাজাগতিক ঘটনার ফলে সেটি নিজ কক্ষপথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে:
এক, নবগঠিত নক্ষত্রমণ্ডলে বিভিন্ন গ্রহের মধ্যে মাধ্যাকর্ষণীয় টানাপোড়েনের কারণে এটি বেরিয়ে আসতে পারে।
দুই, সংঘর্ষজনিত বিচ্ছিন্নতা: কোনো বৃহৎ মহাজাগতিক সংঘর্ষের ফলে এটি তার মূল কক্ষপথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।
তিন| এটি কোনো নক্ষত্রের অংশ না হয়েই সরাসরি গ্যাসীয় মেঘ থেকে জন্ম নিতে পারে, যা ছোট নক্ষত্র গঠনের মতোই প্রক্রিয়া।
এই বিচ্ছিন্ন গ্রহটি প্রমাণ করে যে, মহাবিশ্বে এমন অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে যা আমরা এখনো জানি না। এটি Exoplanet (এক্সোপ্ল্যানেট) গবেষণার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। বিজ্ঞানীরা এই গ্রহটি পর্যবেক্ষণ করে জানতে চাইছেন:
এই ধরনের বিচ্ছিন্ন গ্রহ কতটা সাধারণ?
এটি কীভাবে উজ্জ্বল থাকে, যদি এর কোনো নক্ষত্র না থাকে?
এর আবহাওয়া ও জলবায়ু কেমন?
PSO J318.5-22 এমন একটি গ্রহ, যা নক্ষত্রের আলোর পরিবর্তে নিজেই ইনফ্রারেড বিকিরণ নির্গত করে। এটি আমাদের নতুন প্রযুক্তি ও দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।
PSO J318.5-22 আমাদের মহাবিশ্বের রহস্যময়তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এটি প্রমাণ করে যে মহাকাশে এমন অনেক কিছুই আছে যা আমাদের বোঝার ক্ষমতার বাইরে। একাকী এই গ্রহ ভবিষ্যতে আমাদের মহাবিশ্বের গঠন ও বিকাশ সম্পর্কে নতুন ধারণা দিতে পারে।